নতুন সেমিস্টারে স্বাগত

ক্যাম্পাস রঙ্গ
নতুন সেমিস্টারে স্বাগত

বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার ভর্তি হয়ে গেলে স্কুল-কলেজের মতো প্রতিবছর ভর্তি হওয়া লাগে না বটে, তবে ছয় মাস পরপর শুরু হয় নতুন সেমিস্টার। এতে ঘটে বিভিন্ন বিপত্তি। সেগুলো নিয়ে লিখেছেন সদ্য নতুন সেমিস্টার শুরু করা জুবায়ের ইবনে কামাল।

নতুন সেমিস্টার শুরুর সঙ্গে একদমই প্রথম সেমিস্টার শুরু করা নবীন শিক্ষার্থীর একটা মিল আছে। তারা ভাবে এই সেমিস্টারে কোনো চাপ থাকবে না; কিন্তু সেমিস্টার শুরু হওয়ার কিছু দিনের মাথায় ভুল ভেঙে যায়। ঠিক যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হয়ে ভুল ভেঙেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ এক শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ‘প্যারা’ নেই শুনে ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল হলে গণরুম ও পরোক্ষ র‍্যাগিং যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে অপেক্ষা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ যেন এক সেমিস্টারের মধ্যে আরেক সেমিস্টার। তাই শেষ পর্যন্ত ‘প্যারাহীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন’ খুঁজতে হল ছেড়ে মেস ভাড়া করে সেখানে উঠতে হয় তাকে।

সেখানেও নতুন বিপদ। বছরে দুই সেমিস্টারের মতো দিনে পানি ছাড়া হয় দুবার। কোনোভাবে সে সময় পানি ধরে রাখতে না পারলে ‘শুকনো’ দিন কাটানো ছাড়া উপায় নেই। বালতি, গামলাসহ অনেক কিছু নিয়ে তৈরি থাকতে হয় নির্ধারিত সময়ে। রুমের সঙ্গী একজন তো পানি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কষ্ট করে হলেও এক লিটার পানি খেয়ে নিত। ‘জানিস তো, সব বালতি তো ভরে গেছে। শুধু পেটটাই খালি।’

মেস জীবনের আরেক বিপত্তি বাথরুম নিয়ে। ক্যাম্পাসের বাথরুমগুলোকে এড়িয়ে সবাই নিজের বাসায় এসে যেই না বাথরুমে ঢোকে, আর বের হওয়ার নাম নেই। গোসল করতে গেলে লাইন পরে যায়। লুঙ্গি ও গামছা কাধে বাথরুমের সামনে তখন শুধুই দাঁড়িয়ে থাকা।

মাঝে মাঝে বাথরুম বিপত্তিতে গোসল না করেই আসতে হয় ক্যাম্পাসে। তখন নিজেকে দেখায় রেলের প্ল্যাটফর্মে অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মতো। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে, এলো চুল, মলিন মুখ। দেখে মনে হবে এই ছেলে নির্ঘাত কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশলীর ছাত্র।

ক্যাম্পাসে উশকোখুশকো অবস্থায় পড়তে গেলে পড়তে হয় আরেক সমস্যায়। মাথার ভেতর গুনগুনিয়ে ওঠে কে যেন—ক্লাসরুম ঘুম ঘুম ক্লাসরুম ঘুম ঘুম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে সদ্য স্নাতক করা রাতুল রাজ্জাক ক্লাসরুমে এমনই এক জোকসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিল। মেস থেকে নির্ঘুম অবস্থায় ট্রেনে চড়ে ক্যাম্পাসে আসার পর ক্লাসে ঘুমিয়েই পড়েছিল। এদিকে নতুন সেমিস্টারে নতুন শিক্ষক। তিনি বললেন, ‘এই ছেলে, তুমি এভাবে ক্লাসে ঘুমিয়ে যেতে পারো না।’ জবাবে রাতুল বলল, ‘পারি স্যার, আপনি একটু আস্তে লেকচার দিলেই ঘুমুতে পারি।’

নতুন সেমিস্টার নিয়ে যত ঝামেলা ও হতাশা থাকুক, একটি আশা থেকেই যায়। নতুন সেমিস্টার মানে মাঝে মাঝে নতুন ব্যাচও। সেখানে নতুন কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে। একাকিত্ব ঘুচিয়ে নতুন করে প্রেম হওয়ার একটি সম্ভাবনা। আমার মতো যারা ‘সদা সিঙ্গেল’, তাদের জীবনে যত নতুন সেমিস্টারই আসুক না কেন, কোনো লাভ নেই। তবে অনেকের জীবনে সম্ভাবনা থেকেই যায়। অনেকের ভাগ্য আবার এত খারাপ যে, প্রতি সেমিস্টারে চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হতে একসময় গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে যায়। তখন তারা চাকরি না খুঁজে বরং সাধু ব্যবসায় নেমে পড়ে। নিজেরা সাধু সংঘ খোলে। এ বিষয়ে একটি জোকস বলে শেষ করা যাক।

সাত সাধু সাতটি পাটি বিছিয়ে তপস্যা করছে। এক লোক বড় সাধুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল—

‘বাবা, মেয়েরা আমার দিকে তাকায় না। দয়া করে উপায় বের করুন।’

শুনে বড় সাধু পাশে বসা ছোট সাধুকে বলল—‘ওই ছোটু, এখানে আরেকটা পাটি বিছা! নতুন সাধু এসেছেন।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com