
কবি নজরুলের নামানুসারে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আছে প্রথিতযশা ভাস্কর শ্যামল দত্তের হাতে গড়ে দৃষ্টিনন্দন নজরুল ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরই চোখে পড়ে এটি।
২০ ফুট উঁচু ভাস্কর্যটি এককথায় চমৎকার। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, অগ্নি-বীণা হল ও জয় বাংলা মোড়ের মধ্যখানে ভাস্কর্যটির অবস্থান। ভাস্কর্যে নজরুলকে দেখা যাবে মোহনীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। ধুতি পরা নজরুল ডান পা কিছুটা সামনে বাড়িয়ে বাঁ পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। গায়ে হাফহাতা গেঞ্জি, কাঁধে চাদর। দুহাত বুকে ভাঁজ করা। মুখে স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য।
ভাস্কর্যের সামনে চমৎকার চত্বর। চত্বরের চারপাশে গোলাকার ও আঁকাঁবাকা বেদিগুলো মনোমুগ্ধকর। কয়েক স্তরের বেদি রয়েছে নজরুল-ভাস্কর্য চত্বরের সামনের অংশে। শ্বেত পাথরের মতো সাদা-শুভ্র টাইলস করা চত্বরে বসে চলে আড্ডা। বেদিতে কালো টাইলস। তাকে ফুটে আছে নানা বর্ণের ফুল। বেদির মাঝে রোপণ করা হয়েছে নানা রঙের ফুলগাছ।
ভাস্কর্যের সম্মুখভাগ দিয়ে রয়েছে সিঁড়ি। আট থেকে দশটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় উপরে। এই সিঁড়ি বেয়ে উঠে মানুষজন নজরুলের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পেছনেই নামার জন্য রয়েছে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট সিঁড়ি।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. মো. সাহাবউদ্দিন। ভাস্কর্যটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা নজরুলকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করি। তার স্মৃতি আমাদের মন ও মগজে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে, মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের জাতীয় জীবনে কবি নজরুলের যে অবদান, ভাস্কর্যটি দেখলে তা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।’
চারুকলা অনুষদের চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘ব্যক্তি নজরুল আমাদের মাঝে নেই। আছে তার প্রেরণা। আমরা এই মাটিতে আজও তার পদধ্বনি শুনি। নজরুল বটতলায় বসে বাঁশি বাজাতেন। আর বটতলার পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত। তাই ক্যাম্পাসে বসলে আমরা যেন আজও তার বাঁশি শুনতে পাই। ভাস্কর্যটি দেখে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যেন নজরুলের চেতনা অনুভব করতে পারে সেই লক্ষ্যেই এটি বানানো।’
ফোকলোর বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জাফর জয়নাল বলেন, ‘কবি নজরুলের গান গল্প ও কবিতা পড়েই তো বড় হয়েছি। ক্যাম্পাসে নজরুলের ভাস্কর্যটা যতবার দেখি ততবার মনে হয়ে তিনি হারিয়ে যাননি। আমাদের মাঝে আজও জীবিত।’
আফরোজ জাহান পড়ছেন লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে। তিনি বলেন, ‘নজরুল স্টাডিজ নামে আমাদেরও একটি কোর্স আছে। এই কোর্সটি পাঠ করে জানতে পেরেছি, নজরুলের ত্রিশাল অধ্যায়ের কর্মকাণ্ড। নজরুল ওই বটতলায় বাঁশি বাজাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি গেছে, ওই রাস্তা দিয়েই নজরুল বিচ্যুতিয়া বেপারির বাড়ি থেকে দরিরামপুর হাইস্কুলে হেঁটে যেতেন।’
যথারীতি আগামী ২৪ মে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। এদিন জাতীয় কবির দীপ্তিমান জীবন ও শক্তিশালী রচনায় আলোকছটায় উদ্ভাসিত থাকবে গোটা ক্যাম্পাস।
লেখক : সেকশন অফিসার, রেজিস্ট্রার দপ্তর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়