ক্যাম্পাসে স্কুটি শেখান নাদিয়া

নাদিয়া রহমান স্মরণ।
নাদিয়া রহমান স্মরণ।ছবি : কালবেলা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান স্মরণ। ক্যাম্পাসে তার আরেক নাম ‘লেডি বাইকার’। শুরুতে শখের বশে মোটরবাইক চালানো শেখেন। পরে অন্য মেয়েদেরও স্কুটি চালানো শেখাতে শুরু করেন নাদিয়া। তার গল্পটা জানাচ্ছেন জান্নাতুল জুঁই মুনা—

২০১৭ সালে বাইক চালানো শুরু নাদিয়া রহমান স্মরণের। ছোটবেলার সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অল্প সময়েই বাইক আয়ত্ত করেন। এরপর ভাবলেন, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য মেয়েদের পথচলা সহজ করতেও কিছু একটা করা দরকার। সেইসঙ্গে যদি কিছু আয় হয়, তবে মন্দ কী।

নাদিয়া বলছিলেন, ‘সব শিখতে হবে এমন একটা মনোভাব ছিল ছোট থাকতেই। তাই একটু বড় হতেই মনে মনে ঠিক করি, স্কুটি আমি চালাবই।’

করোনা মহামারিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে নিজের জেলা কুমিল্লায় সামিহা নামে এক বন্ধুর ‘উইংস অব ড্রিম’ নামে একটি মেয়েদের বাইকার গ্রুপে যুক্ত হন নাদিয়া। দুই বন্ধু একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। ট্রেনার হিসেবে ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই পরে নিজ ক্যাম্পাসে ‘নোয়াখালী লেডি বাইকার গ্রুপ’ নামে ট্রেনিং সেন্টার শুরু করেন।

নাদিয়া বলেন, ‘প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় নিজের ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। ক্যাম্পাসের বাইরের নারীরাও স্কুটি শিখতে আসেন আমার কাছে। এ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩০০-এর বেশি এবং নোয়াখালীতে প্রায় ১০০ মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’

প্রতিবন্ধকতা যে একেবারেই ছিল না তা নয়। নাদিয়া বলেন, ‘অনেকেই সহজভাবে দেখত না। বাঁকা চোখ দেখতে হতো অনেক। শুনেছি নেতিবাচক মন্তব্যও। এগুলো থাকবেই। সেসব পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সাপোর্টটাও জরুরি। তাদের অনুপ্রেরণাতেই এতদূর আসা।’

কোর্সের মেয়াদ ১৫ দিন। তবে কারও বেশি সময় প্রয়োজন হলে সেটাও দেন নাদিয়া। শেখানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাচ চালু করেন। যারা সাইকেল চালাতে জানেন তাদের জন্য ফি ৩৫০০ টাকা আর যারা পারেন না তাদের জন্য ৪০০০ টাকা।

নাদিয়ার কাছে বাইক চালানো শিখতে আসা নোবিপ্রবি বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবা বলেন, ‘খুব ইচ্ছে হতো আমিও একদিন বাইকে চড়ে পাখির মতো উড়ব। কিন্তু সাহাস পাচ্ছিলাম না। ক্যাম্পাসে এসে স্মরণ আপুকে দেখার পর মনে হলো আমিও পারব। শুরুটা আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। আপুর হাত ধরে স্কুটি চালানো আয়ত্ত করি। এখন আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে আমি স্কুটিতে ঘুরে বেড়াই।’

নাদিয়ার সহপাঠী নায়লা হোসেন খন্দকার নিজেও বান্ধবীর কাছে স্কুটি চালানো শিখেছেন। তিনি বললেন, ‘নাদিয়া আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। তার দেখাদেখি আজ নোবিপ্রবির অনেক মেয়ে বড় কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ভয় পেছনে ফেলে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এখন থেকেই।’

নাদিয়ার বাইক চালানোর প্রশিক্ষণের বিষয়টা নিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাও বেশ খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ এক শিক্ষক বলেন, ‘নাদিয়াকে ক্যাম্পাসে বাইক চালাতে দেখলে মনটা আনন্দে ভরে যায়। মনে হয় এই বুঝি আমাদের কন্যারা এগিয়ে যাচ্ছে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com