চৈত্র শেষ না হতেই ফোঁসফাঁস শুরু করেছে গ্রীষ্ম। গরমের ফলগুলো এখনো কাঁচা থাকলেও ক্যাম্পাসে পাকতে শুরু করেছে ঘটনার পাঁচন। মাথায় আইসব্যাগ বেঁধে সেসব গল্পের সন্ধানে নেমেছিলেন জুবায়ের ইবনে কামাল।
গল্পটা শুনেছিলাম আমার বড় মামার কাছ থেকে। তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তখন একবার প্রচুর গরম পড়েছিল। এতই গরম যে, মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে থাকতেন তার সহপাঠী মনিরুল। এই গরমেও নাকি তিনি হলের রুম ছেড়ে বের হতেন না। একদিন সকালে চাউর হলো সূর্য সেন হলে একটা মুরগি সেদ্ধ ডিম পেড়েছে। তাও শুধু একটা নয়, অনেক। চাইলে সেটা পরীক্ষা করেও দেখা যাচ্ছে। গুজব ছোটে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ডের গতিতে। অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীই সূর্য সেন হলের দিকে আসতে থাকল। জানা গেল, সেদ্ধ ডিমের ঠিকানা আর কোথাও নয়, সোজা মনিরুলের রুম। মনিরুলের বিছানাতেই পড়ে আছে গোটাকতক সেদ্ধ ডিম। তাকে নাকি কে বলেছিল গরমে বসে বসে ডিম পাড়ছিস নাকি! তিনি বলেছিলেন, পাড়লে সেদ্ধ ডিমই পাড়ব। এই হলো গুজবের গোড়া। ফেসবুক ছাড়াই ঘটনা রটে যায় দ্রুত।
এই গরমে ক্যাম্পাসের খাবারেও প্রভাব পড়েছে। ঢাবির পালি ও বুড্ডিস্ট স্ট্যাডিজের শিক্ষার্থী উম্মে তাসলিমা আবিষ্কার করেছেন গরমের সঙ্গে ক্যাম্পাসের খাবারের মানের ব্যস্তানুপাতিক একটা সম্পর্ক আছে। মাংসের টুকরোর ব্যাসার্ধ নাকি কোনো এক সূত্র মেনে ছোট হচ্ছে ক্রমশ। অবশ্য এর সঙ্গে ব্রয়লারের দামের একটা সরল সমীকরণও থাকতে পারে। তবে এটা পরীক্ষিত সত্য যে, গরম যতই পড়ুক, হলের ক্যান্টিনের খাবার কিছুতেই গরম পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার দিয়ে হলেও অন্তত গরম রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এবার প্রাইভেটের ক্লাসরুমের এসি প্রসঙ্গে আসা যাক। এ নিয়ে চিন্তিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র রাশিদ রহমান। বলল, ‘বাইরে থেকে ক্লাসে ঢুকলে মনে হয় এসির টেম্পারেচার জিরো করে দিই। কিন্তু এসি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়াতে এখন আর আমাদের রিমোট দেওয়া হচ্ছে না। আমি এর আংশিক নিন্দা জানাই।’
এদিকে এসি নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে প্রেজেন্টেশন দিতে আসা শিক্ষার্থীরা। তাদের ব্লেজার ও প্যান্ট ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলেও ডায়াসে উঠে হাসিমুখে বলতেই হচ্ছে—‘ওয়েলকাম টু আওয়ার প্রেজেন্টেশন’।
তবে এমন গরম থেকে বাঁচতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী খোরশেদ আমিন অহেতুক ঢু মারছিল এসি-ফ্রিজ-টিভির শোরুমে। কাচঘেরা আউটলেটগুলোতে হিমশীতল বাতাসের ছড়াছড়ি কি না। কদিন আগে শীতল মগজে সে একটা বিজনেস আইডিয়াও পেয়েছে। খোরশেদ আমাকে জানাল, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে হাতপাখা হাতে এজেন্টসহ ‘বাতাস সার্ভিস’ চালু করবে সে। শহরের গরমে ফ্যান বা এসির ভেজাল বাতাস খেয়ে যারা বিরক্ত, তারা নিশ্চয়ই গ্রামের তালপাখার বাতাস খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বাড়তি চার্জের বিনিময়ে বাতাস হোম ডেলিভারি মানে বাড়িতে গিয়ে হলেও বাতাস করে দেওয়া হবে। তার কথা শুনে অতঃপর আমি প্রমাণ করতে পারি যে, মামার কথাই সত্য—গরমের কিঞ্চিৎ প্রভাব মগজেও পড়ে বটে।