রাবিতে খৈলান সন্ধ্যা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খৈলান পালা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খৈলান পালা।ছবি : কালবেলা

বসন্তের সন্ধ্যায় ফুরফুরে বাতাসে বসে ছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে। বড় ভাইরা বললেন, চলো সবাই আজ খৈলান পালা দেখে আসি। নাম শুনেই বুঝে ফেললাম, এটি আমাদেরই কোনো একটি ঐতিহ্য। কথা না বাড়িয়ে ছুট লাগালাম ক্যাম্পাসেরই সিরাজী ভবনের সামনে। সেখানে সাজানো হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে বড় করে তীর্থক পালা পার্বণ-১৪২৯ লেখাটা দেখেই রোমাঞ্চ অনুভব হচ্ছিল। এর আগে কখনো পালা দেখা হয়নি!

‘নাটক শুধু শিল্প নয়, মুক্তির হাতিয়ার’ স্লোগানকে সামনে রেখে মঞ্চায়িত হয় খৈলান পালা নামক থিয়েটার নাটকটি। স্লোগান শুনেই মোটামুটি বুঝে যাই সমাজের শাসন-শোষণ নিয়ে হবে এ নাটক। নাটক শুরুর আগে টুকটাক জানাশোনা বাড়িয়ে নিলাম। আমরা এখন যেটিকে উঠান বলি, আগে তা খুলি নামে পরিচিত ছিল। উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় এই খুলি বা উঠানে সন্ধ্যার দিকে বসত কুশান গানের আসর। ওই গানে উঠে আসত বাংলার পালা শিল্পীদের বৈচিত্র্যময় কাহিনি। বিশেষ করে তাদের দুর্দশার কথা। সেই সময় তারা সমাজে বেশ নিগ্রহের শিকার ছিল বলা যায়। আর সেসব গল্পগাথা নিয়েই আজকের খৈলান।

নাটকের শুরুতে কুশানের সাবলীল পরিবেশনা এবং অভিনয় আকর্ষণ জাগাল। কুশানের মধ্যে কৃষি এবং কৃষকের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডও ফুটে ওঠে। আবার এই কুশানেই রামায়ণের কাহিনিতে ভর করে উঠে আসে শোষণ ও রুখে দাঁড়ানোর গল্প।

খৈলানে ব্যবহার করা হয়েছে তবলা ও হারমোনিয়াম। ঢোল, তবলা, একতারা, দোতারার সঙ্গে পরিচিত হলো ক্যাম্পাসের নবাগতরাও।

এবারের খৈলানে নাট্যশিল্পীদের দুর্দশাও উঠে এসেছে। দেখানো হয় এক আয়োজকের থেকে টাকা নিয়ে পালা করার পর দেখা গেল তা আয়োজকের মনঃপূত হয়নি। তাই তিনি মাঝপথেই নাটক বন্ধ করে দেন এবং বায়নার টাকা ফেরত চান। শিল্পীরা হতদরিদ্র হওয়ায় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আয়োজক তার প্রভাব খাটিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীকে দিয়ে তাদের মারধর করে ও বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে। শিল্পীরা এলাকার গণ্যমান্যদের কাছে সুরাহা চাইতে গেলে তিনি আশ্বাস দেন ঠিকই; কিন্তু বিচার হয় না।

খৈলান পালা দেখতে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। একজন বললেন, ‘এই আধুনিক যুগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পালা গান, নাটক দেখে সত্যি অভিভূত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই বিষয়গুলো আরও বেশি করে চর্চা করা উচিত বলে মনে করি।’

খৈলানের শিল্পী নাসিম আহমেদ বলেন, ‘ভালো লাগার জায়গা থেকেই এতে অভিনয় করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এই ঐতিহ্যগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত।’

নাটক শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালের উপ-উপাচার্য অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে এবং এই ধারা বজায় রাখতে আমাদের এমন পালা গান এবং বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সুস্থধারার সংস্কৃতির চর্চা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তার কথাও বলেন তিনি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com