চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন আতিক জাফর। তার এ পদে চাকরি পাওয়ার প্রচেষ্টা ও প্রার্থীদের জন্য দিয়েছেন পরামর্শ। অনুলিখন : আনিসুল ইসলাম নাঈম
শুরুর কথা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে আমাদের অনার্স শেষ হয় ২০১৮ সালে। মূলত আমার প্রস্তুতি ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে। শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১০ম গ্রেডে ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি পাই। যেটি আমার চাকরি জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে আইডিয়াও পাই তখন। আমার ধারণা ছিল, একটু গুছিয়ে পড়তে পারলে প্রথম শ্রেণির চাকরি পাব। তাই ওই চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে শুরুতে পরিকল্পনামাফিক পড়া হচ্ছিল না। পরে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে পুরোদমে পড়া চালিয়ে যাই। গণিত ও ইংরেজির দক্ষতাই আমাকে সবসময় এগিয়ে রেখেছে। তবে তার চেয়েও বড় বিষয় ছিল পরিকল্পনা ও গোছালো প্রস্তুতি।
যোগ্যতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে যে কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা চার বছরমেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি এবং এসএসসি ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পরীক্ষায় ন্যূনতম দুটি প্রথম বিভাগ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণরা আবেদন করতে পারবেন না। পেশাগত সহকারী পরিচালকদের (যেমন—প্রকৌশল, গবেষণা, মেডিকেল, পরিসংখ্যান) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক থাকতে হবে। বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী ব্যক্তিদের সন্তান ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বয়সসীমা ৩২ বছর।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পরীক্ষা তিন ধাপে হয়—এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক। এমসিকিউতে ১০০ নম্বর, লিখিততে ২০০ এবং ভাইভাতে ২৫ নম্বর থাকে। এমসিকিউ পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা রচনা, ইংরেজি রচনা, অনুবাদ, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। বর্তমানে এ পদে আবেদনের প্রক্রিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-রিক্রুটমেন্ট ওয়েবসাইটের (www.erecruitment.bb.org) মাধ্যমে হয়ে থাকে।
বেতন স্কেল
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ মোতাবেক নবম গ্রেডে বেতন পেয়ে থাকেন। যার স্কেল ২২০০০-৫৩০৬০ টাকা। এ ছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আরও সুযোগ-সুবিধা থাকতে পারে।
প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, তারা পড়াটাকে বিভিন্ন সেগমেন্টে গুছিয়ে নিয়ে শুরু করবেন। প্রিলিতে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ করে টপিক নির্ধারণ করে ফেলা যায়। এরপর সেই টপিকের বিস্তারিত যে কোনো বই থেকে পড়ে ফেলতে হবে। গণিত ও ইংরেজির জন্য প্রিলি ও লিখিতর প্রস্তুতি একসঙ্গে নিতে হবে। বেসিক বুঝে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা, ইংরেজিতে গ্রামারের জন্য ক্লিফস টোফেল শেষ করে বাজারের কোনো একটি বই থেকে গ্রামারের টপিকগুলোর অনুশীলন করতে হবে। লিখিতর ক্ষেত্রে ইংরেজির জন্য যে কোনো দুটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় থেকে বা যে কোনো বই থেকে প্রতি সপ্তাহে অনুবাদ চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। ফোকাস রাইটিংয়ের জন্য ফ্রি-হ্যান্ড চর্চা করার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট নিয়ে রাখতে হবে। লিখিততে বর্তমানে সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন দেখা যায়। এর জন্য বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, মুদ্রা, নোবেলজয়ীদের লেখা বই, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, খেলাধুলা, বাজেট, সাম্প্রতিক ইস্যু এবং ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন টার্মস পড়লেই যথেষ্ট।
মৌখিকের প্রস্তুতি
মূলত এ পদে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি তেমন কষ্টের নয়। ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকায় এতে খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হয় না। তবে আত্মবিশ্বাস থাকাটা ভাইভায় মুখ্য বিষয়। ভাইভা নেবেন ডেপুটি গভর্নরসহ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তারা দেখবেন পরীক্ষার্থী দেশ-জাতি, অর্থনীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নিজের পঠিত সাবজেক্ট সম্পর্কে কতটুকু আপডেটেড। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে দেশ ও বিশ্বের খবর কতটুকু রাখছেন সেটিও দেখা হয়।