৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে এখন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আছেন মো. সাদরুল আলম সিয়াম। তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম
প্রস্তুতি নিয়ে বলুন আগে
৪০তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন সবে অনার্সের থিসিএস প্রেজেন্টেশন শেষ করেছি। অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএসের আবেদন করি। তখনো আমার প্রস্তুতি শূন্য। আমি যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি, প্রস্তুতির প্রথম দিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। প্রথমেই আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলোর সমাধান করি। এতে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এর পর যে বিষয়গুলোতে দুর্বলতা ছিল সেগুলোতে গুরুত্ব দিয়েছি এবং গ্যাপগুলো কাভার করেছি। অনেক বেশি বই না পড়ে একটি ভালো বই-ই ভালোভাবে পড়ার পক্ষে আমি। তবে এ ক্ষেত্রে একাগ্রতা ও একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। এক দিনে ১৫ ঘণ্টা পড়ে ফেললাম আর বাকি দুই-তিন দিন একদমই পড়লাম না, এমনটা করা যাবে না। সবার সক্ষমতাও সমান নয়। প্রস্তুতির প্রথম থেকেই সর্বোচ্চটা দিতে হবে। পরেরবার আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেব, এমনটা ভাবা সহজ হলেও বাস্তবে তা হয় না। এর মাঝে দুটি ‘মক ভাইভা’ দিয়েছিলাম। সেটাও নার্ভাসনেস কাটাতে সাহায্য করেছে।
কী কী বই পড়েছেন?
বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে যে কোনো একটি প্রকাশনীর এক সেট বই অনুসরণ করা যেতে পারে। মাধ্যমিকের বাংলা ব্যাকরণ, গণিত, উচ্চতর গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, পৌরনীতি, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি এবং উচ্চ মাধ্যমিকের উচ্চতর গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান বইগুলো থেকে রিলেটেড টপিকগুলো পড়েছিলাম। এ ছাড়া সংবিধান, ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. হায়াৎ মামুদের ভাষা শিক্ষা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পড়েছি।
নতুনরা প্রস্তুতির শুরুটা করবে কীভাবে?
প্রস্তুতির প্রথমেই bpsc.v.bd থেকে প্রিলিমিনারির সিলেবাস ডাউনলোড করে নিতে হবে। এটা সবসময় চোখের সামনে রাখতে হবে। এর পর আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলতে হবে। এতে নিজের দুর্বলতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। নিজের স্ট্রং জোনে সর্বোচ্চ নম্বর তোলার চেষ্টা করতে হবে এবং দুর্বলতাগুলো দ্রুত সারিয়ে নিতে হবে। প্রিলিমিনারি হচ্ছে ক্যান্ডিডেট বাদ দেওয়ার পরীক্ষা। ৪-৫ লাখ থেকে ১৫-১৬ হাজারের ভেতর আপনাকে থাকতে হবে। তাই নেগেটিভ মার্কিং ও টাইম ম্যানেজমেন্টে সতর্ক হতে হবে। আমার প্রিলিমিনারি পাসের কৌশলটা ছিল সহজ। আমি বাংলা সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি সাহিত্য, ইংরেজি গ্রামার, গণিত ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশগুলোতে বেশি জোর দিয়েছি।
লিখিতর প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শ?
প্রিলির পর লিখিতর আগে খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রিলিমিনারির সময়ই লিখিতর প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে হবে। লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড়। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব মুখস্থ করতে গেলে বিপদে পড়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলির মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও অর্থনীতি অংশ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির কনসেপচুয়াল অংশগুলোতেই প্রায় পাঁচশোর বেশি নম্বর থাকে এবং এসবে নম্বর তোলাও সহজ। পাশাপাশি প্রতিদিন কয়েকটি পত্রিকা পড়ে যেতে হবে।
ভাইভার প্রস্তুতি?
বিসিএসের গেম চেঞ্জার হলো ভাইভা। বরাদ্দ ২০০ নম্বর। কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পেতে ভাইভায় ভালো করতেই হবে। এ ব্যাপারে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক এক আলোচনায় বলেছিলেন, ‘প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর জ্ঞান যাচাই করা হয়। যারা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেছেন, তারাই যে ভাইভায় ভালো করবেন, বিষয়টি এমন নয়।’ ভাইভার মাধ্যমে প্রার্থীর আর্টিকুলেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, উপস্থাপনা, গেটআপ ইত্যাদিও দেখা হয়। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে প্রার্থী কীভাবে তা সামলে নিচ্ছেন সেটাও দেখা হয়।