ম্যানেজার হিসেবে নতুন?

ক্যারিয়ার টিপস
ম্যানেজার হিসেবে নতুন?

কথায় আছে কেউ নাকি জন্মগতভাবে ভালো ব্যবস্থাপক। তবে বেশিরভাগকেই তৈরি হতে হয় কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে। প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক, ম্যানেজারদের মৌলিক বিষয়গুলো মোটের ওপর একই। নতুন যারা ম্যানেজার হতে চলেছেন, তাদের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন ফয়সল আবদুল্লাহ—

সবাই খুশি হবে না : নতুন ম্যানেজার হলে হাসিমুখে সবাইকে খুশি করতে উঠে পড়েন অনেকে। যেন অধীনদের হাসিখুশি থাকার ওপরই নির্ভর করছে তার চাকরি বা পদোন্নতি। আবার শুরুতেই কঠোর-কঠিন আচরণ ফেলতে পারে বেকায়দায়। তাই মানসিক প্রস্তুতিটা রাখতে হবে যে নতুন ম্যানেজার মানেই চলতে হবে শাঁখের করাতের ওপর।

কর্মীদের জানুন : নিজেকে তো অনেক জানলেন, এবার কর্মীদের জানুন। যতই মুখে টিমওয়ার্কের কথা বলুন, প্রতিটি কর্মীকে আলাদা করে জানতে হবে। আলাদা করে কার কী গুণ, কার কোন বিশেষ দক্ষতা, বাড়তি যোগ্যতা এবং কার কী দুর্বলতা বা প্রবণতা সেটাও জানা চাই প্রথমে। এতে করে কার সঙ্গে কীভাবে ‘ডিল’ করবেন, সে ধারণাটাও পেয়ে যাবেন চটজলদি।

মুখোমুখি : গতানুগতিক ওরিয়েন্টেশন তথা পরিচয় পর্বের চেয়ে সরাসরি ফেস-টু-ফেস আলোচনা বেশি কার্যকর। উৎপাদন প্রক্রিয়ার কর্মপন্থা, সমস্যা, সম্ভাবনা, আইডিয়া, কর্মীদের সমস্যা নিয়ে সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলুন। প্রজেক্টের বর্তমান অবস্থা জানা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে এ ধরনের পন্থা বেশ কার্যকর। এতে করে প্রতিটি কর্মীই নিজের কাজ গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে এবং নিজের কারণে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সচেষ্ট হবে। এতে করে নতুন ম্যানেজার হিসেবে আপনার টেনশনও কমে যাবে হু হু করে।

সমালোচনা : একজনের কাজে বাকিদের ফিডব্যাকও গুরুত্ব দিন। শুরু থেকেই এটাকে আপনার বিভাগের একটা চর্চায় পরিণত করুন। এতে করে পুরো প্রজেক্টেই সবার মানসিক অংশগ্রহণ থাকবে। ম্যানেজার হিসেবে আপনাকে যাচাই করা বাদ দিয়ে তখন সবাই নিজের ও সহকর্মীর কাজ নিয়েই মনোযোগী থাকবে।

বাজে পারফরম্যান্সের সমালোচনা তো করতেই হবে। তবে প্রশংসার মতো নেতিবাচক সমালোচনারও একটা সীমারেখা থাকা দরকার। নতুন ম্যানেজারদের জন্য এ ব্যাপারে একটু বাড়তি সহানুভূতির সুর জরুরি। তা না হলেও কর্মী তার বড় শক্তি ‘প্রেষণা’ হারাতে পারে। তবে নতুন ম্যানেজার হলেও এ ধরনের সমালোচনায় দ্বিধা দেখানো যাবে না। যা বলার তা দৃঢ়চিত্তে ঝটপট বলে দেওয়াই শ্রেয়।

পার্টনার : কোনো সমস্যা সমাধানে অধীনদের পার্টনার হিসেবে দেখুন। তাদের বোঝান যে, ‘এ সমস্যা দেখতে ম্যানেজারিয়াল বা প্রশাসনিক মনে হলেও এর ভুক্তভোগী কিন্তু সবাইকেই হতে হবে। তাই আসুন ব্যাপারটা একসঙ্গেই সমাধান করি।’

লক্ষ্য : নতুন ম্যানেজার হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের যার যার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিতে হয়। বিশেষ করে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে। এ কাজে লক্ষ্যটা যেন সুস্পষ্ট ও সংখ্যাবাচক থাকে সেটাও খেয়াল রাখবেন। ‘আমরা করব জয়’ বা ‘অনেককে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাব’ বলার চেয়ে ‘এক মাসে ৫০টি স্কুলে পাঠাগার স্থাপন’ কিংবা ‘জুলাইর ৩১ তারিখের মধ্যে ১০টি ডিজাইনের কাজ শেষ হবে’ এমন লক্ষ্যই কাজে আসবে।

কমাতে হবে ইগো : নতুন ম্যানেজারদের অনেকেই ভাবেন তারা ম্যানেজার হয়েছেন মানেই সব দায়িত্ব তার কাঁধে এসে ভর করেছে এবং ব্যর্থতার যাবতীয় দায়ভারও তাকে নিতে হবে। এখন এ ধারণা বদলেছে ঢের। এখন ম্যানেজাররাও ভুল-ত্রুটির ভেতর দিয়ে একটি চলমান শিখন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যান। তাই কোনো ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সরাসরি ‘সব দায় আমার’ না বলে সমস্যার বিশ্লেষণ করে একটা স্বচ্ছ প্রতিবেদন তৈরি করুন। আর এমনটা করতে গেলে আপনার আত্মম্ভরিতার (ইংরেজিতে যাকে বলে ইগো) মাত্রা বেশ খানিকটা কমিয়ে আনতে হবে।

শিখুন : নতুন ম্যানেজার হিসেবে অধীনদের কাছ থেকেও শেখার চেষ্টা করুন। তারা যে যেসব কাজে দক্ষ বা তাদের যেসব যোগাযোগ কর্মকাণ্ড রয়েছে, সেসব সম্পর্কে তাদের কাছ থেকেই জানুন। এতে শেখাও হবে, আবার কর্মীদের ভেতর জবাবদিহির চর্চা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com