দুদকের সহকারী পরিচালক : লিখিত ও মৌখিকের প্রস্তুতি

মো. ইসমাইল হোসেন
মো. ইসমাইল হোসেন

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. ইসমাইল হোসেন। এ পদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি অনুলিখন নাজমুল ইসলাম

২০১৫ সালে বিএসসি (ইঞ্জি.) শেষ হওয়ার পর প্রায় তিন বছর কয়েকটি কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করি। আমার বয়স যখন ২৭ পেরিয়ে যাচ্ছে তখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। লক্ষ্য ছিল প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার। এরই মধ্যে কোম্পানির চাকরি থেকে অব্যাহতি নিই। দিনের পুরো সময় পড়াশোনায় দিতে থাকি। দুদকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তাতে আবেদন করি এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া সব পরীক্ষা শেষ হলেও করোনার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। পরে মৌখিক এবং প্রার্থী ভেরিফিকেশনের পর ২০২২ সালের জুনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হই এবং চাকরিতে যোগদান করি।

পদ পরিচিতি ও যোগ্যতা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের একটি স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এখানে সহকারী পরিচালক পদটি একটি নবম গ্রেডের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদ। এ পদে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা হলো কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মানসহ প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা চার বছর মেয়াদি দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি।

পরীক্ষার ধাপ ও বাছাই পর্ব

সহকারী পরিচালক পদের জন্য পাঁচ ধাপে প্রার্থী বাছাই করা হয়—বাছাই পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি), লিখিত পরীক্ষা, কম্পিউটার লিখিত, কম্পিউটার ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা। মোট ৪৫০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রিলিতে ১০০, লিখিত পরীক্ষায় ২০০, কম্পিউটার লিখিত ৫০, কম্পিউটার ব্যবহারিক ৫০ ও মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বর। এ পাঁচ ধাপে উত্তীর্ণ হলে পুলিশ ও গোয়েন্দা ভেরিফিকেশনের পর চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রিলিমিনারি

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর। পরীক্ষার সময় ৬০ মিনিট। নেগেটিভ মার্কিং থাকতে পারে, আবার নাও পারে। তাই প্রশ্ন পাওয়ার পর প্রথম কাজ নির্দেশনা দেখা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য থেকে ২০টি এমসিকিউ থাকে। এগুলো বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের মতো হয়ে থাকে। ইংরেজির প্রস্তুতি অনেকটা ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার মতো। এখানেও ২০টি এমসিকিউ থাকে। বিগত পরীক্ষাগুলোয় গ্রামার ও ভোকাবুলারিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গণিত অংশে সাধারণত বীজগণিত, জ্যামিতি ও পরিমিতি হতে ১০ থেকে ২০টি প্রশ্ন থাকে। বিজ্ঞান ও কম্পিউটার অংশের জন্য বিসিএস প্রিলির সিলেবাস অনুসরণ করে পড়লে ভালো করা সম্ভব। এতে ১০টির কম/বেশি প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে ২৫টির কম/বেশি প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। প্রশ্নগুলো বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের মতোই হয়ে থাকে।

লিখিত

লিখিত পরীক্ষা দুটি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে লিখিত পরীক্ষার নম্বর ২০০ ও সময় ৪ ঘণ্টা। এখানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সমস্যা-সম্ভাবনা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প প্রভৃতি বিষয় থেকে প্রশ্ন হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির মধ্যে জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সংগঠন, ভূ-রাজনীতি ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি (হট টপিক) থেকে প্রশ্ন হতে পারে। এ ছাড়া Translation, Letter, Essay থেকেও কিছু প্রশ্ন হতে দেখা যায়। কম্পিউটার বিষয়ে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে কম্পিউটার পেরিফেরালস, প্রকারভেদ, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, এএলইউ, ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, অপারেটিং সিস্টেম, মাইক্রোসফট অফিস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও টপোলজি এবং সাইবার অপরাধ ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন হতে দেখা যায়।

কম্পিউটার ব্যবহারিক

এটি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং, মাইক্রোসফট অফিস সংক্রান্ত কাজ দেওয়া হয়।

মৌখিক

মৌখিক পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজের জন্মস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পঠিত বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। মূলত প্রার্থী যে বিষয়ে অধ্যয়ন করেছে সেই বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। যেমন—আমি প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের ছাত্র হওয়ায় আমার কাছে প্রশ্নগুলো হয়েছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com