
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিরোধ যতই তুঙ্গে থাকুক না কেন, রাশিয়া কখনো যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়াবে না। স্থানীয় সময় গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
অ্যানুয়েল থ্রেট এসেসমেন্ট (বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন) প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব ও চীনের সম্পর্কের নতুন সমীকরণ হয়েছে। এই সমীকরণ আমাদের খুবই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। পশ্চিমাবিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্ব এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়েনি।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ বছর পার হয়ে গেছে। চলমান এ যুদ্ধে রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। ফলে পরোক্ষভাবে অনেকটা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই লড়ছে মস্কো। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাবিশ্বের সরাসরি সংঘাতের শঙ্কা বাড়ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ চায় না। তবে এটি ঘটার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
রুশ নেতারা এখন পর্যন্ত চলমান সংঘাত ইউক্রেনের সীমানার বাইরে যেতে পারে—এমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভ্যন্তরীণ অবস্থানকে দুর্বল করছে। ফলে হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতেও পারেন।
অন্যদিকে এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে, রাশিয়াকে দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপে ইউক্রেন এখনো প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছে—এমন ধারণায় রাশিয়াকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মস্কো তার নিজের অবস্থান শক্ত করতে বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করবে। সেগুলো হতে পারে সামরিক, নিরাপত্তা, ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টিকারী সাইবার ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম। আমাদের আশঙ্কা, মস্কো যখন তার স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে দেখবে, তখন আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে দেশটি সংকটের মধ্যে প্রবেশ করবে।
রাশিয়া তার আশপাশে অস্তিত্বের হুমকি অনুভব করলে সেটি পুতিনের শাসনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে। তাই সহযোগিতা জোরদার এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করতে বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসেবে জ্বালানিকে ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া।
অতীতে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করায় রাশিয়া বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এসব দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে অবরুদ্ধ বা দখল, শস্যের অবকাঠামো ধ্বংস, কৃষিজমির বিশাল অংশ দখলের পর ফলন ব্যাহত, শ্রমিকদের বাস্তুচ্যুত এবং এমনকি রপ্তানির জন্য নির্ধারিত শস্য চুরি করে খাদ্যকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে রাশিয়া।