
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর পেনশন সংস্কার নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। এমনকি পার্লামেন্টেও হচ্ছে প্রবল প্রতিবাদ। ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট পেনশন পাওয়ার বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করতে বদ্ধপরিকর। আর এর বিরুদ্ধেই কার্যত বিক্ষোভ চলছে। বৃহস্পতিবার রাজধানী প্যারিসসহ অনেক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
এ পর্যন্ত ২১৭ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বিক্ষোভ সারা দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। প্রেসিডেন্ট মাখোঁর প্রস্তাব নিয়ে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। সেখানে বামপন্থিসহ মাখোঁ-বিরোধীরা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তা হারানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই পরিস্থিতিতে মাখোঁ একের পর এক বৈঠক করতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভোটাভুটিতে না গিয়ে সরকার বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। ভোটাভুটি ছাড়াই পার্লামেন্টে বিল পাস করানো হবে। পার্লামেন্টে বর্তমানে মাখোঁর দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে এই ঘোষণা করছেন, তখন বামপন্থিরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে’। কিছু এমপি খুব জোরে জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেন, পেনশনপ্রাপ্তদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করতে চায় না সরকার। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরই ট্রেড ইউনিয়নগুলো বিক্ষোভ তীব্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। এমনকি জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জও করা হয়। এর পাল্টায় বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়ে। মার্শেইসহ ফ্রান্সের আরও কয়েকটি শহরে পেনশন সংস্কার বিলের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত ২১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংস্কারবিরোধী ইউনিয়নগুলো আগামী ২৩ মার্চ ফের ধর্মঘট ডেকেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের অবস্থানও যে বিলটির বিরুদ্ধে তা একাধিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায় পেনশন সংস্কার না করে ধনীদের ওপর আরও বেশি কর আরোপসহ আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার এ পদক্ষেপ থেকে পিছু না হটলে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূলত রাজকোষে যাতে আরও অর্থ আসে তার ব্যবস্থা করার জন্যই মাখোঁ পেনশন পাওয়ার বয়স আরও দুই বছর বাড়াতে চাইছেন।
সরকারি সূত্রের দাবি, এই ব্যবস্থা না নিলে আর্থিক পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। সরকার ঘাটতি সামলাতে পারবে না। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, এটা সরকারের নীতির ব্যর্থতা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এই প্রস্তাবের বিরোধী।