
পাকিস্তান থেকে স্কটল্যান্ড পথটা বেশ দীর্ঘ। সেই দীর্ঘ পথকে মুহূর্তেই কাছে নিয়ে এলেন হামজা ইউসেফ (৩৭)। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হামজা হতে যাচ্ছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার (প্রধানমন্ত্রী)। স্থানীয় সময় গত সোমবার স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতৃত্বের লড়াইয়ে জয়ী হন তিনি। ব্রিটেনের বড় কোনো দলের প্রথম মুসলিমপ্রধান হলেন তিনি। এই জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি নিকোলা স্টার্জেনের স্থলাভিষিক্ত হবেন হামজা। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আলজাজিরার।
বিজয়ী ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত হামজা বলেন, আমি স্কটল্যান্ডের সবার ফার্স্ট মিনিস্টার হবো। প্রতিটি দিনের প্রতিটি মিনিট আপনাদের সম্মান ও আস্থা অর্জন এবং ফের অর্জনের জন্য কাজ করে যাব। চূড়ান্ত ভোটে ৫২ শতাংশ তার পক্ষে যায়। তার নেতৃত্বের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোট হওয়ার কথা। যদি সেখানে তিনি জিতে যান তাহলে আজ (বুধবার) তিনি ফার্স্ট মিনিস্টার হিসেবে শপথ নেবেন। ভোটের প্রচারে তিনি স্কটিশদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। এ ছাড়াও জীবনযাত্রার ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির সংকট মোকাবিলা, ফের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান, লিঙ্গ রূপান্তর নিষিদ্ধকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হওয়ার ওপর জোর দেন। বিজয়ী ভাষণে বলেন, প্রথমেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, সেই ক্ষতি থেকে দেশের প্রতিটি মানুষকে যতদূর সম্ভব রক্ষার জন্য কাজ করব।
জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার এবং কল্যাণমূলক অর্থনীতির পথে হাঁটব, যাতে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়। ফার্স্ট মিনিস্টার হয়ে দেশের জন্য কাজ করা সুযোগ পাওয়া আমার জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। এটি আমার জন্য দারুণ সম্মানের। হামজার জন্ম স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় ১৯৮৫ সালের ৭ এপ্রিল। তার পূর্বপুরুষ গত শতকের ৬০-এর দশকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব থেকে স্কটল্যান্ডে যান। হামজার বাবা মুজাফফর ইউসেফের জন্ম পাকিস্তানে। মা সায়িস্তার জন্ম কেনিয়ায়। এসএনপির নেতা নির্বাচিত হয়ে হামজা বলেন, আমার পূর্বপুরুষ যখন স্কটল্যান্ডে আসেন, তখন তারা ঠিকমতো ইংরেজি শব্দ বলতে পারতেন না। সে সময় তারা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি, তাদের উত্তরসূরি একদিন ফার্স্ট মিনিস্টার হবে।
স্কুলে পড়ার সময়ই হামজার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে ওঠে। ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলা, ইরাক-আফগান যুদ্ধের ডামাডোলে তখন বিশ্ব। একদিকে পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিমবিরোধিতা বাড়ছে, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব চরম আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে গ্লাসগোর হাচসন্স গ্রামার স্কুলের এক সহপাঠী তার কাছে জানতে চান, ‘মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রকে কেন ঘৃণা করে?’ এই প্রশ্ন তাকে ব্যাপক ভাবিয়ে তোলে।