
বিশ্ববেলা ডেস্ক
ইরানে মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের মধ্যে গত দুই দিনে তিন নারী সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। আটক তিন নারী সাংবাদিক হলেন–মেলিকা হাশেমি, সাইদেহ সাফিয়ে ও মেহেরনৌশ জারেই। এদিকে দেশটির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু হয়। যথাযথ বিধি মেনে পোশাক না পরায় মাশা আমিনিকে আটক করা হয়েছিল। মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভ রুখতে দমনপীড়ন চালাচ্ছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। বিক্ষোভকারীদের দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইরান সরকার। ইরানে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ সমর্থন দিয়েছে। সেইসঙ্গে চলছে নির্বিচারে ধরপাকড়। এ ধারাবাহিকতায় আটক করা হয়েছে তিন নারী সাংবাদিককে। তেহরান সাংবাদিক ইউনিয়নের বরাতে দেশটির সংস্কারবাদী সংবাদপত্র এতেমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ ৪৮ ঘণ্টায় আটক হওয়া তিন নারী সাংবাদিক হলেন–মেলিকা হাশেমি, সাইদেহ সাফিয়ে ও মেহেরনৌশ জারেই। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, আটক হওয়া তিন নারী সাংবাদিককে এভিন কারাগারে রাখা হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে আটক হওয়া অনেককেই এ কারাগারে রাখা হয়েছে। তবে তাদের আটকের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। কয়েক মাসের বিক্ষোভে ইরানে প্রায় ৮০ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, সাইদেহ সাফিয়ে লেখক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। মেহেরনৌশ জারেই বেশ কিছু সংস্কারবাদী লেখা লিখে আলোচিত হয়েছেন। আর মেলিকা হাশেমি সহর নামের একটি সংবাদমাধ্যমে যুক্ত রয়েছেন।
তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা : এদিকে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র দমনপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম এশীয় দেশটির মোল্লাতন্ত্রের ওপর চাপ বাড়াতে সোমবার তারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী (আইআরজিসি) ও বিক্ষোভ দমনের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইআরজিসি কো-অপারেটিভ ফাউন্ডেশন ও এর পরিচালনা পর্ষদের ৫ সদস্যের ওপর। ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপমন্ত্রী নাসের রাশেদি এবং আইআরজিসির ৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাদের কালো তালিকায় ঢুকেছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ইরানের শাসকগোষ্ঠীর বর্বরতা চালানোর বেশিরভাগ অর্থ আসা আইআরজিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভকে লক্ষ্য করেই তারা এবারের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তালিকায় এর সঙ্গে জাতীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে দমনপীড়নে সমন্বয় করা ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও স্থান পেয়েছেন। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, আইআরজিসি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দমনপীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে এবং এরা মানবাধিকারের বিস্তৃত লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের শিয়া মোল্লাতন্ত্রের সুরক্ষায় এই আইআরজিসি গঠিত হয়েছিল; বাহিনীটিতে এখন সেনা, নৌ ও বিমান ইউনিট মিলিয়ে আনুমানিক ১ লাখ ২৫ হাজারের মতো সদস্য আছে বলে মনে করা হয়।