রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে বাখমুত

বিশ্ববেলা ডেস্কঃ ইউক্রেন যুদ্ধ
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে বাখমুত

ইউক্রেন যুদ্ধের বয়স ১৫ মাস পার হতে চলল। এই সময়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তায় ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালালেও ততটা সুধিধা করতে পারছেন না। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটা হয়েছে ইউক্রেনের বাখমুতে। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আট মাস ধরে তুমুল লড়াই হয়েছে। গত শনিবার শহরটিকে পুরোপুরি মুক্ত করেছে বলে দাবি করেন রুশ ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। আগামী ২৫ মে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে বাখমুতের অবস্থান হস্তান্তর করে যুদ্ধের ময়দান ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও ইউক্রেন এখনো বলে চলছে বাখমুত তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে প্রিগোজিন বলেন, যুদ্ধে আর সামনের দিকে যায়নি ওয়াগনার সেনারা। আর কোনো ভূখণ্ডও দখল করেনি। প্রতিশ্রুত ভূখণ্ডের শেষ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দখল করেছি আমরা। এবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান হস্তান্তর করে আমরা বাখমুত ছাড়ব।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বাখমুত শহর মুক্ত হয়েছে জানিয়ে এর জন্য ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনী ও রুশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। ইউক্রেনীয়রা বাখমুত বললেও রাশিয়ানরা শহরটিকে সোভিয়েত আমলের নাম আর্তিওমস্ক বলে। গত রোববার ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পুতিন বলেন, রাশিয়ার জয়ের মাধ্যমে শহরটি নিয়ে লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটেছে। এই লড়াইয়ে যারা বীরত্ব দেখিয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হবে।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও সেনাপ্রধান বাখমুত নিয়ে রাশিয়ার দাবি অস্বীকার করেন। যদিও ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় পদাতিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানান, ইউক্রেনের সেনারা বাখমুতের একটি ছোট অংশে অবস্থান করছে এবং তারা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শহরটি মূলত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার জন্য বাখমুত নগরীর কৌশলগত মূল্য কম হলেও এ নগরী দখল করাটা দেশটির জন্য এ পর্যন্ত লড়ে আসা দীর্ঘ যুদ্ধে এক প্রতীকী জয়। বাখমুতে লড়াই শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের আগস্টে। ক্রমে তা রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়। বাখমুতে একসময় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রুশ বাহিনীর আরও অগ্রসর হওয়া এবং দনবাস স্বাধীনের জন্য বাখমুত দখল করা দরকার মস্কোর। কৌশলগত গুরুত্ব ততটা না থাকলেও প্রতীকী কারণে উভয় পক্ষের কাছে বাখমুত অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। শহরটির দখল নিয়ে টানা লড়াই ও লড়াইয়ের তীব্রতা এর প্রতীকী গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের দিক থেকে এই শহর রক্ষা প্রশ্নে একটা জেদ কাজ করছে। একই সঙ্গে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাদের দৃঢ় প্রতিরোধ যুদ্ধের উদাহরণ মনে করা হচ্ছে এই শহরকে।

অন্যদিকে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার প্রয়োজন একটা জয়। এর মধ্য দিয়ে রুশ বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করতে চায় মস্কো। ইউক্রেনে হামলা শুরুর প্রথম মাসগুলোয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাথমিক অগ্রগতি অর্জন রুশ বাহিনী। রুশ বাহিনী অনেক জায়গায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষ দিকে বাখমুত দখলের লড়াইয়ে নামে ভাগনার গ্রুপ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com