
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ভারতীয় আলোচক অমিতাভ কান্ত বলেছেন, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক দারিদ্র্য মোকাবিলায় যখন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তখন ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আমরা শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। আমাদের উচিত দরিদ্রদের দিকে মনোযোগ দেওয়া। গত বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন। খবর রয়টার্স ও ইন্ডিয়া টাইমস ডটকমের।
গত তিন সপ্তাহে ভারতে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের পরপর দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিতীয় বছরে পড়া ইউক্রেন যুদ্ধ বাকি সব আলোচনাকে আড়ালে ঠেলে দিয়েছে। চলতি বছর জি-২০-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানায়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কান্ত বলেন, ইউরোপ বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, বৈশ্বিক ঋণসহ সব ধরনের উন্নয়নমূলক ইস্যুগুলোকে স্থবির করে রাখতে পারে না। কারণ, বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ৭৫টি দেশ বৈশ্বিক ঋণের ভারে নুয়ে পড়ছে, বিশ্বের এক-ততৃীয়াংশে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সর্বোপরি বিশ্বের ২০ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। এসব দিকে আমাদের অতিসত্ত্বর মনোযোগ দিতে হবে। এক ইউক্রেন যুদ্ধ এসব দিক থেকে আমাদের দৃষ্টি সরাতে পারে না।
বিশ্ব ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি এত বেশি মনোযোগ দিয়েছে, যার ফলে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পুষ্টির ঘাটতি বেড়েছে, মানুষের শেখার আগ্রহ কমেছে। বলা চলে মানুষ অচল হয়ে যাচ্ছে, নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। এ থেকে উত্তোরণ জরুরি। বিশ্বকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। ইউরোপ বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সেগুলোর সমাধান খুঁজতে হবে।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, এটা এখন স্পষ্ট যে, ইউরোপের সমস্যা বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যা তাদের সমস্যা না। এই মানসিকতা থেকে ইউরোপকে বের হয়ে আসতে হবে।
ভারত শুরু থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করতে অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লি বরাবরই এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। একই সময় তারা রাশিয়া থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে তেল কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ৯-১০ তারিখে নয়াদিল্লিতে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে ভারতীয় প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা কান্ত বলেন, এ নিয়ে কথা বলার সময় এখনো হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে পুতিনের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা এখনই তারা বাতিল করছে না। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পুতিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বাইরে আর কোথাও যাননি। গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেননি তিনি।