বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। সাধারণত অদক্ষ কর্মীরাই সেখানে যান বাংলাদেশ থেকে। অথচ মালয়েশিয়ায় বাড়ছে অতি দক্ষ কর্মীর চাহিদা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচেতন নয়। বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে মালয়েশিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিমুখী সম্ভাবনা। এক সাক্ষাৎকারে দৈনিক কালবেলাকে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট এবং মেট্রোনেটের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আলমাস কবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাওন সোলায়মান...
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাজার কেমন?
২০১৮-১৯ অর্থবছর মালয়েশিয়ায় রপ্তানি ছিল ২৭৭ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানির বিপরীতে দেড় বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে বাংলাদেশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়ে। সে অর্থবছর দেশটিতে রপ্তানি হয় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য; আর আমদানি হয় ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা সেখানে কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে পারি। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, চামড়া ও চামড়াজাত, প্লাস্টিক, আইটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করা সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে বেশ জটিলতা দেখা যায়।
এর মূল কারণ ‘সিন্ডিকেট’। এ সিন্ডিকেট কর্মী পাঠানোর বাজারকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। এর সমাধানে আমাদের সংগঠন সরাসরি কাজ করতে পারে না। এজন্য বায়রা এবং ভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে। তবে আমরা তাদের এ প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ দিয়ে থাকি।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। এ থেকে বাংলাদেশ কী সুবিধা নিতে পারে?
করোনার সময় মালয়েশিয়া থেকে অনেক কর্মী নিজ দেশে ফিরে গেছেন। গত বছর তাদের শ্রমবাজার খোলার পর সেখানে প্রবল কর্মী সংকট দেখা দেয়। যেমন সেখানে পাম অয়েল চাষে প্রচুর কর্মী প্রয়োজন হয়। কর্মীর অভাবে শস্য সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপাকে পড়ে পাম অয়েল শিল্প। মালয়েশিয়ায় আমাদের দেশ থেকে যায় অদক্ষ কর্মীরা। কিছু সংখ্যক মাঝারি দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীও আছে। তবে সেখানে আরেকটি সম্ভাবনার বিষয়টি আগে কেউ মূল্যায়নই করেনি। সেটি হলো ‘হাই স্কিলড’ বা উচ্চদক্ষ কর্মী পাঠানো। তাদের দেশে এ ধরনের কর্মীর চাহিদা প্রচুর। বর্তমানে তারা ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে অতিদক্ষ কর্মী নিচ্ছে। বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
সেই সুযোগ ও সম্ভাবনার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলবেন?
মালয়েশিয়ার পেনাং ‘এশিয়ার সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে পরিচিত। কারণ, সেখানে ৫০ বছর আগে বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি কার্যক্রম শুরু করেছিল। আজ দেশে কম্পিউটারে ব্যবহৃত কোনো চিপ একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, সেটি হয়তো মালয়েশিয়ায় তৈরি। বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের অনেক এখন চাহিদা। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীন ও তাইওয়ান বেশি বেতন দিয়ে মালয়েশিয়ার কর্মীদের টেনে নিচ্ছে, যেটাকে আমরা ‘ব্রেইন ড্রেইন’ বলি। কাজেই সেখানে আমরা আমাদের উচ্চদক্ষ কর্মী পাঠাতে পারি। দেশটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা সংগঠনের সভাপতি দাতুক উইলিয়ামের মতে, শুধু পেনাংয়েই ৫০ হাজার দক্ষ প্রকৌশলীর চাহিদা রয়েছে।
তাহলে তো আমাদেরও ‘ব্রেইন ড্রেন’ হবে …
ঠিক তা হবে না। কারণ, এখানে একটা দ্বিমুখী সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশেই এখন স্বল্প পরিসরে চিপ ডিজাইন করা হচ্ছে। আমরা মালয়েশিয়াকে চিপ ডিজাইনের কাজটা আমাদের এখানে করার প্রস্তাব দিতে পারি। এর সঙ্গে ফেব্রিকেশনের মতো জটিল কাজগুলো তারা করল। এতে আমরা আইসিটিবিষয়ক সেবা রপ্তানিতে সক্ষম হব। যার ওপর নির্ভর করে দেশে চিপ ডিজাইন খাত বড় হবে। পাশাপাশি পরের ধাপের কাজগুলোর জন্য সেখানে আমরা কর্মী পাঠাতে পারি। তারা সেখানে হাতে কলমে বিষয়গুলো শিখবে। মালয়েশিয়া সরকার তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত আছে। এতে আমরা কর্মী পাঠিয়ে এবং সেবা রপ্তানি করে দুভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব।
আপনাদের চেম্বার থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি?
গত নভেম্বরে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে মালয়েশিয়া সফরকালে পেনাং প্রদেশের গভর্নর এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করি। তারা বাংলাদেশ থেকে এ বিষয়ক কর্মী নিতে রাজি আছেন। প্রয়োজনে তারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে নিয়ে যাবে। আগামী মে মাসে আমরা আরেকটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সেখানে যাচ্ছি। তখন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের এ দিকটায় নজর দেওয়া হয়নি। প্রতিবছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে কর্মবাজারে প্রবেশ করে। তাদের আমরা এ সুযোগ দিতে পারি।