প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করে বীমা দাবি পরিশোধ

প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করে বীমা দাবি পরিশোধ

দেশের বীমা খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, আমানতের টাকা ও বীমা দাবি পরিশোধে কোম্পানির টালবাহানা বন্ধে কঠোর অবস্থানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ একটি আলাদা সেল গঠন করেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ তিনি এসব কথা বলেন। সিএমজেএফের সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। সংগঠনটির সদস্যরা বীমা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জয়নুল বারী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বীমার সময় শেষে যেন সবাই টাকাগুলো বুঝে পায়; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সঠিক সময়ে গ্রাহক টাকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির কাছে সরাসরি কিংবা ই-মেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রচুর অভিযোগ আসছে। এ অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ শুরু করছি। প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও এসব বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে।’

বীমা কোম্পানিতে গ্রাহকের আমানতের টাকা দিয়ে বেশি দামে জমি কিনে এবং বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন—বিষয়টি আইডিআরএর কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। কিছু কোম্পানি অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছে। কেউ ম্যানেজমেন্টে খরচ বেশি করেছে। কেউ জমি কিনেছে বেশি দামে, এসব জমি বিক্রি করতে গেলে দেখা যায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য চাইলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যৌক্তিক দামে বিক্রি করতে, তাহলে গ্রাহকের টাকাগুলো পরিশোধ করা যাবে। এতদিন শুধু অনিয়মের কারণে কোম্পানিকে জরিমানা করা হতো। এখন অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।’

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ৭টি কোম্পানির বোর্ডকে ডেকেছি এবং তাদের প্রিমিয়াম কেমন এবং কী ধরনের সম্পদ আছে তা দেখেছি। যেসব পলিসি ম্যাচিউরড হয়, সেগুলো কীভাবে পরিশোধ করবে সেই পরিকল্পনাও চেয়েছি। এসব তথ্য দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ বীমা খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা—এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল বারী বলেন, ‘নন কমপ্লায়েন্স বড় চ্যালেঞ্জ। কোম্পানির অনিয়ম বন্ধ হলেই অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।’

আলোচনার শুরুতে বীমা খাত সম্পর্কে বলেন, বীমা খাতের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু এ খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এ নিয়ে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সমাধান হবে। সমস্যার মধ্যে সঠিক সময়ে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করা অন্যতম সমস্যা। মূলত কোম্পানির অব্যবস্থাপনার কারণে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। আবার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আমাদের দায়িত্বকালীন ৩ বছর মেয়াদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যা বীমা খাতের উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

বীমা উন্নয়নে অনেক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পলিসি সম্পর্কে গ্রাহকরা জানেন না। সব পলিসি লাভজনক নয় বিধায় কোম্পানি সেগুলো প্রচার করে না। তাই গ্রাহকের স্বার্থে প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে পলিসির পেছনে অনেক শর্ত ইংরেজিতে লেখা থাকে, যা গ্রাহক কখনো পড়ে না, বুঝে সই করে না। তাই আমরা পলিসির শর্তগুলো বাংলায় করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এখন থেকে পলিসির শর্ত বাংলায় লেখা থাকবে, যাতে গ্রাহক বুঝে-শুনে পলিসি করতে পারে।’

বীমা কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পর্কে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো আগে প্রান্তিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা শেষে আইডিআরএ জমা দিত। এখন নির্দেশনা দিয়েছি, প্রতি প্রান্তিক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন যাতে জমা দেয়। আর এসব অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলেও অতিরিক্ত ব্যয়, অনিয়ম সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানতে পারবে। আর তাতে বীমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com