ভারতে পণ্য রপ্তানি ৩ বছরে দ্বিগুণ

ভারতে পণ্য রপ্তানি ৩ বছরে দ্বিগুণ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সারা বছর যে লেনদেন হয়, তার ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হচ্ছে স্থলবন্দর দিয়ে। তবে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী অনেক স্থলবন্দর কর্মকাণ্ডে থাকলেও সেখানে বাণিজ্যিক লেনদেন বেনাপোল-পেট্রোপোল বন্দরের ব্যবহার হয় বেশি। যার হার প্রায় ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত ৫ বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি গত ৩ বছরে হয়েছে দ্বিগুণ, যা খুবই আশাব্যঞ্জক।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এতে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তার, সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা, ডিসিসিআই পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, খায়রুল মজিদ মাহমুদ প্রমুখ।

ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক উপস্থাপিত প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে ভারত সরকার বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল শিগগির কাজে আসবে। সেইসঙ্গে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ পাইপলাইন’-এর কার্যক্রম চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন ডিজেল পরিবহনে সক্ষম হবে, যা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বাংলাদেশে ভারতীয় উদ্যোক্তারা একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে বলেও অভিমত দেন তিনি।

ড. মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেলসেতু স্থাপনসহ বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে প্রভূত উন্নয়ন হবে। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশে বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি তাগিদ দেন। ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুমি হচ্ছেন। এটা নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ড. মসিউর রহমান।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, শুল্কবহির্ভূত যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় আয় যথাক্রমে ১৭ শতাংশ ও ৮ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে অবস্থান করছে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত এলাকা। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা গেলে রাজস্ব আয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যারিস্টার সাত্তার বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে অ্যাগ্রো-প্রসেসিং, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, তথ্য-প্রযুক্তি ও সেবা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলেও ভারতীয় উদ্যোক্তা-দূতাবাস কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।

সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, গত এক দশকে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে প্রস্তাবিত ‘সেপা’ চুক্তির বাস্তাবয়ন হলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় আরও অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। হাইকমিশনার বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আধুনিক সড়ক, রেল ও নদীপথের যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে ৭টি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, এটা সম্পন্ন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৭টি স্থানে ‘বর্ডার হাট’ পরিচালনার মাধ্যম স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই পণ্য রপ্তানিতে সক্ষম হচ্ছেন। ভবিষ্যতে বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানিতে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com