চাপের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আদায়। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বহুমুখী প্রতিকূলতায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে অর্থনীতিতে যে ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা রাজস্ব আদায়ের গতিকে টুঁটি চেপে ধরেছে। প্রতি মাসেই পিছিয়ে থাকছে লক্ষ্যমাত্রার আদায়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের গেল ৭ মাসেই ঘাটতি তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। বাকি ৫ মাসে এই ঘাটতি পূরণে আরও আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এই যখন পরিস্থিতি তখন চলমান অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে সরকার আইএমএফএর কাছ থেকে আগামী ৪ বছরে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণের যে কর্মসূচিতে আছে, এতে এনবিআরের ওপর তৈরি হয়েছে শর্ত পূরণের আরেক চাপ। সংস্থাটির শর্তানুযায়ী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বা ৬১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আদায়ের লড়াইয়ে কঠিন চাপের মুখে পড়েছে এনবিআর।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার এনবিআরের কর, ভ্যাট ও শুল্কনীতি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। এই বৈঠকে কর জিডিপি বাড়ানোর নানা দিক নিয়ে প্রথম দিনের আলোচনা হয়েছে। এতে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভর্তুকি কমানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে এনবিআরের ভর্তুকি কি পরিমাণে দেওয়া আছে, সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আর কোন কোন খাতে ভর্তুকি কমানো যায়, সেই খাতগুলো চিহ্নিত করার আলোচনাও হয়েছে। তবে এই পর্যালোচনার ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রধান সমস্যা ডেটা। কারণ, কোন কোন খাতে কি পরিমাণে ভর্তুকি দেওয়া আছে সেই বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে এনবিআরের হাতে নেই।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, এই সময়ে আমরা সব খাতের ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়ার বাস্তবতায় নেই, এটা আইএমএফও অনুধাবন করেছে। তবে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আজ মঙ্গলবারের বৈঠকে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। অর্থবছরের বাকি সময়ে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের রাজস্ব আহরণের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে আয়কর ও ভ্রমণ খাত। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ২০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৫৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ মাসে আয়কর খাতে রাজস্ব ঘাটতি ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। আয়কর ও ভ্রমণ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর শুল্ক খাতে ৭ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুল্ক খাতে রাজস্ব ঘাটতি ১১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। আর শুল্ক খাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ভ্যাটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৬৬ হাজার ৬০২ কোটি টাকা।