জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০৯:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তবু শেয়ারে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীর

তবু শেয়ারে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীর

পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাত ভালো অবস্থানে থাকলেও এর শেয়ারে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৫ ব্যাংকের মধ্যে ২৮টির পর্ষদ মুনাফা থেকে ২ হাজার ৭০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে। এ নিয়ে দুই বছর ভালো লভ্যাংশ দিলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এর জন্য বিনিয়োগকারীদের অল্পে বেশি লাভের প্রবণতাকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে ফ্লোর প্রাইস। আর এ কারণেই হাইব্রিড কোম্পানিতে আগ্রহ বেশি। তবে ব্যাংক খাতের এই উত্থানকে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক মনে করছেন তারা।

২৮ ব্যাংক নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে। বাকি সাত ব্যাংকের মধ্যে এ বছর শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। লোকসানে থাকায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আর মুনাফা করেও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না রূপালী ব্যাংক। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৬২ টাকা দর নিয়ে বর্তমানে বাজারদরের তালিকায় শীর্ষে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। পরের অবস্থান ব্র্যাক ব্যাংকের। এই শেয়ার লেনদেন হচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩৮ টাকায়। ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারদর প্রায় ৩৫ টাকা। আর ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে ৭ থেকে ৮ ব্যাংকের শেয়ারদর। ১০ থেকে ২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে ১৩ ব্যাংকের শেয়ার। বাকিগুলোর দাম ফেসভ্যালুর নিচে অর্থাৎ ১০ টাকার কম।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪১১। এ বছর সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ সাড়ে ১৭ শতাংশ বা ১৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে প্রাইম ব্যাংক। ১৫ শতাংশ হারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে ব্যাংক এশিয়া। ১০ শতাংশ হারে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে ইসলামী ব্যাংক। ১০ শতাংশ হারে এক্সিম ব্যাংক ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ; প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ হারে ১৪৩ কোটি ৪২ লাখ; ইস্টার্ন ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ বা ১৩৪ কোটি ১৪ লাখ; যমুনা ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ বা ১৩১ কোটি ১১ লাখ; শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১২ শতাংশ হারে ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ; পূবালী ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ হারে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ; আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১২ শতাংশ হারে ১২৭ কোটি ৭৯ লাখ; ডাচ্-বাংলা ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ হারে ১২১ কোটি ৭৬ লাখ; ১০ শতাংশ হারে সিটি ব্যাংক ১২০ কোটি ৬ লাখ টাকা দেবে।

এ ছাড়া সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ১১২ কোটি ২৪ লাখ; ১০ শতাংশ হারে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১০৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; ১৪ শতাংশ হারে উত্তরা ব্যাংক ৯০ কোটি ১২ লাখ; ১০ শতাংশ হারে ট্রাস্ট ব্যাংক ৭৭ কোটি ৮৪ লাখ; ৬ শতাংশ হারে সাউথইস্ট ব্যাংক ৭৪ কোটি ১৯ লাখ; ৫ শতাংশ হারে ইউসিবি ৭০ কোটি ৩১ লাখ; সাড়ে ৭ শতাংশ হারে এনআরবিসির ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ; ৬ শতাংশ হারে ঢাকা ব্যাংক ৫৬ কোটি ৯৮ লাখ; ৫ শতাংশ হারে এনসিসি ৫২ কোটি ৮৮ লাখ; ৫ শতাংশ হারে ইউনিয়ন ব্যাংক ৫১ কোটি ৮১ লাখ; ৫ শতাংশ হারে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫১ কোটি ৭১ লাখ; ৫ শতাংশ হারে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৪৭ কোটি ২ লাখ; আড়াই শতাংশ হারে আইএফআইসি ব্যাংক ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ; ৫ শতাংশ হারে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৩১ কোটি ৯৮ টাকা; সাড়ে ৩ শতাংশ হারে সাউথবাংলা ব্যাংক ২৮ কোটি ৮৫ লাখ এবং আড়াই শতাংশ হারে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এবার শুধু নয়, গত বছরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। এর পরও বলা হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। সত্যিই কি তারা বিনিয়োগ করেছেন? ১০ শতাংশের ওপরে মুনাফা দিলেও তাদের সে দিকে আগ্রহ নেই! তারা অল্প সময়ে বেশি মুনাফার আশায় বাজারে এসেছেন। পুঁজিবাজারের বিষয়টা এমন নয়। আমাদের বিনিয়োগকারীরা এখন লভ্যাংশনির্ভর হতে চাইছেন না, যা তাদের পুঁজিকে নিরাপদ রাখবে। তারা হুজুগে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্যের ওপর দায় চাপান। এখন ব্যাংক খাত ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। দামও কম আছে; কিন্তু সে সুবিধা বিনিয়োগকারীরা নিচ্ছেন না। আমার আশা, বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসবেন। এতে বাজার ও বিনিয়োগকারী উভয়ই লাভবান হবেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালবেলাকে বলেন, এখন বাজারে আয়োজন করে জুয়া খেলা চলছে। তাই ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে, এমন বিনিয়োগকারী পাওয়া যাবে না। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। জাংক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে একটি চক্র জুয়ায় মেতেছে। ফলে অতিলোভী বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি ও লভ্যাংশের দিকে নজর নেই। তারা জুয়া খেলায় ব্যস্ত। আমার মনে হয়, কমিশনও এটাই চাইছে। ফলে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হচ্ছে না। তারা হাইব্রিড শেয়ার কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে। তাই ব্যাংক ভালো লভ্যাংশ দিলেও তাতে আগ্রহ নেই। আমার ধারণা, বর্তমান বাজারে আর্থিক খাতে যারা বিনিয়োগ করবে, তাদেরই সামনে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোনারগাঁয়ে দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে রূপায়ন গ্রুপের যাকাত সামগ্রী বিতরণ

ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া চাইলেই ব্যবস্থা : আইজিপি

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে নিয়োগ, এসএসসি পাশেও আবেদন

ঈদের আগে জুতার কারখানায় রহস্যের আগুন

সরকারকে হেফাজতের হুঁশিয়ারি

জাবিতে ছাত্রলীগ কর্মীসহ বহিষ্কার ৭

হরিপুরে সৎসঙ্গ আশ্রম মন্দির উদ্বোধন

রেলপথ ও সড়ক পথ অবোরধের হুঁশিয়ারি ছাত্রলীগের

১০

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

১১

দেশের অসংখ্য মানুষ খাবারের কষ্ট পাচ্ছে : চরমোনাই পীর

১২

শৈলকুপায় ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

১৩

আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি (৩০ মার্চ ২০২৪, শনিবার)

১৪

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

১৫

সিন্ডিকেট চক্র সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে : ডা. ইরান 

১৬

অহেতুক কথা বলে হাস্যাস্পদ হবেন না : সরকারকে আলাল

১৭

জমির দাবিতে বাবার কবরে শুয়ে দাফনে বাধা

১৮

লাইলাতুল কদর চেনার আলামত

১৯

বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি 

২০
*/ ?>
X