খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় ঝিমিয়ে পড়া কার্পাস তুলা চাষে প্রাণ ফিরে এসেছে। চলতি মৌসুমে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ২৫ হেক্টর জমিতে অন্তত ৪০ কৃষক তুলা চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৭ দশমিক ৫০০ কেজি। যার বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা। এ হারে কৃষকের আয় হবে প্রায় ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ মৌসুমে তুলা চাষে অনেকেই ভাগ্যবদল হওয়ায় ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে তুলা সংশ্লিষ্টরা।
তুলা চাষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কার্পাস তুলা চাষে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উৎপাদনের খরচের চেয়ে তুলা বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি দামে। উৎপাদন ব্যয় মাত্র ৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত তুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। বিগত সময়ে উৎপাদিত তুলা বাজারজাতে অনিশ্চয়তায় থাকায় তুলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ ছিলে না। তবে এখন থেকে উৎপাদিত তুলা সরকারিভাবে বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তাসহ প্রণোদনা বাবদ বীজ, সার ও ওষুধ পেয়ে চলতি মৌসুমে কার্পাস তুলা চাষ করেছে প্রায় ৪০ প্রান্তিক কৃষক। সরকারের পাশাপাশি ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ শীর্ষক প্রকল্পে তুলা উৎপাদনে প্রণোদনা দিতে এগিয়ে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন (রুই জাতীয় মাছ) কেন্দ্র হালদা নদীর উজানে বসবাসরতদের বিকল্প জীবিকা সৃষ্টিতে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ, পিকেএসএফ ও হালদা রক্ষা কমিটি। হালদা পাড়ে চাষকৃত ক্ষতিকর তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে অন্যান্য ফসল চাষাবাদে আগ্রহী করে চাষিদের দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনাসহ নানা সহায়তা। এতে তামাক চাষ কমে আসলেও কাটেনি চাষিদের অর্থনৈতিক সংকট। ফলে তামাক চাষিদের বিকল্প জীবিকায়ন সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে তুলা চাষের উদ্যোগ নিয়েছে হালদা পাড়ের চাষিরা। সম্প্রতি উপজেলার গোরখানা (হালদার উজান) এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এমন ইতিবাচক উদ্যোগ ও সফলতার কথা জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দারিদ্র্য বিমোচন শীর্ষক প্রকল্পের সহকারী কটন ইউনিটের এক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের মরাডলু এলাকার তুলা চাষি আলী আকবরের তুলা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, পাকা তুলায় ক্ষেত সাদা হয়ে আছে। জমির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ তুলা পেকে গেছে। এ সময় চাষি আলী আকবর জানান, গত মৌসুমে ১ দশমিক ২০ শতক জমিতে তুলা চাষে খরচ হয়েছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত তুলা বিক্রি হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। এ বছর সমপরিমাণ জমিতে তুলা চাষে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে গত বছরের চেয়ে এবার খেতে ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি নির্ধারিত মূল্য ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। তিনি জানান, পাহাড়ের দ্বিতীয় শ্রেণির জমি তুলা চাষে উপযোগী। এখানে অন্যান্য ফল উৎপাদনে ব্যয় ও ঝুঁকি বেশি হলেও তুলা চাষে খরচ কম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ শীর্ষক প্রকল্পের সহকারী কটন ইউনিট কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রণোদনাসহ উৎপাদিত তুলা বাজারজাতে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এর ফলে এখানকার কৃষকরা এখন কার্পাস তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এখানকার গড়ে ৮০ শতাংশ কৃষকের ক্ষেতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে প্রান্তিক কৃষক কার্পাস তুলা চাষ করে লাভবান হবে বলে আশা করা যায়। আগামী মৌসুমে হালদা নদীর উজানের চাষিদেরও তুলা চাষে সম্পৃক্ত করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উৎপাদিত তুলা বাজারজাতে ন্যায্যমূল না পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষক তুলা উৎপাদনে আগ্রহ দেখাতো না। ফলে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা ও পর্যালোচনায় তুলা চাষে প্রণোদনাসহ উৎপাদিত তুলা বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা দেয় সরকার। একই সঙ্গে প্রণোদনা হিসেবে সরকারিভাবে বীজ, সার এবং ওষুধ বিতরণ করা হয় এবং উৎপাদিত তুলা ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়াতেই পাল্টে যায় প্রান্তিক কৃষকের চিন্তাধারা।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে মানিকছড়ি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মোট ২৫ হেক্টর জমিতে অন্তত ৪০ কৃষক তুলা চাষ করেছে। তুলা চাষের ব্যাপ্তি প্রসারে আগামী মৌসুমেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের তুলা চাষে সহায়তা করা হবে।