দাম না কমলে প্রয়োজনে ডিম-মুরগি আমদানি

দাম না কমলে প্রয়োজনে ডিম-মুরগি আমদানি

সব ধরনের নিত্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অস্থিরতা বাড়ছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজারেও। তবে আশঙ্কার কারণ হলো, যেনতেন অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে এই দাম। ফলে গরিবের আমিষ ও প্রোটিন সরবরাহের অন্যতম উৎস্য এই দুটি পণ্য স্বল্প আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত পরিবারও হারিয়েছে কেনার সামর্থ্য। এ নিয়ে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার অভিযোগ এবং প্রশাসনের সঙ্গে খাত-সংশ্লিষ্টদের চোর-পুলিশ খেলাও চলছে দীর্ঘদিন। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি সেই অভিন্নই। এমন প্রেক্ষাপটে কঠোর হয়েছে সরকার। দাম না কমলে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম আমদানি করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পোলট্রি খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সরকারের এমন অবস্থানের কথা জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম না কমলে আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। এই দামকে আর্টিফিশিয়াল মনে করেন ভোক্তার মহাপরিচালক। তার মতে, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ভোক্তার পকেট কাটছে একটি চক্র। আর এ বিষয়টি সব পক্ষের আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

যে চক্র এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশে বাজার নির্ধারণে নেপথ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি করার তথ্যও দেন তিনি।

পাশাপাশি সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু প্রতিবেদন আকারে, আগামী রোববারের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনে পাঠানো হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

এর ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা কমিশন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি ট্যারিফ কমিশন বর্তমান বাজার মূল্যের যৌক্তিকতার ওপর পর্যালোচনা করবে।

এ ছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে—আগামী সপ্তাহ থেকে সব দোকানে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যতালিকা বাধ্যতামূলক প্রদর্শন করতে হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে চাইলে ক্রয় রসিদ দেখাতে হবে। না পারলে দোকান মালিক সমিতির সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দোকান বন্ধ করা হবে এবং বাজার কমিটি বিলুপ্তির জন্য এফবিসিসিআই ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে।

এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আজকের আলোচনার পর আশা করি মুরগির দাম পড়তির দিকে থাকবে। এর পরও যদি দেখা যায়, কাজ হচ্ছে না। তাহলে কার স্বার্থে ১৭ কোটি মানুষ সাফার করবে। আমদানি করে যদি ১৮০ টাকায় মুরগি খেতে পারি, আমদানি করে যদি ৮ টাকা ডিম খেতে পারি, তাহলে আমাকে তো সে বিষয়গুলো ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় দেখতে হবে। তবে এমন সিদ্ধান্ত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি আবদুল হান্নান, ভোক্তার পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ পোলট্রি খাতের করপোরেট ব্যবসায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারের ব্রয়লার মুরগির পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বাজারে সিন্ডিকেট, অতিমুনাফা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সিন্ডিকেট তৈরিতে এসএমএস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com