রপ্তানি বাজার অনুসন্ধানে বাধা তথ্যের ঘাটতি

পুরোনো ছবি।
পুরোনো ছবি।

নতুন বাজারে নতুন পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে চায় সরকার। এর জন্য দেশের রপ্তানিকারকদের ব্যক্তিগত তৎপরতার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে সরকার নিয়োজিত মিশন ও কমার্শিয়াল কাউন্সিল অফিসও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশি পণ্যের বিষয়ে আমদানিকারক দেশগুলোর উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের সেই সব মিশন ও কমার্শিয়াল কাউন্সিল অফিসে যোগাযোগ কম। কেউ যোগাযোগ করলেও তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশসহ আগ্রহের দেশ ও পণ্য সম্পর্কে জানতে খোঁজ করেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) ওয়েবসাইট।

বৈশ্বিক এই ওয়েবসাইটটি বিভিন্ন দেশের তথ্যে ঠাসা থাকলেও সেখানে নেই বাংলাদেশ সম্পর্কিত তেমন কোনো তথ্য। যে কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার ও দাম সম্পর্কে জানতে পারছেন না বিদেশি ক্রেতারা। এ ছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতাও জানতে পারছেন না বিদেশিরা। এসব কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এই ওয়েবসাইটে আমদানি-রপ্তানির পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনবিআরের পাঠানো রপ্তানি আয়ের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ইপিবি বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। বিশেষ করে রপ্তানি পণ্যের বাজার অনুসন্ধান থেকে শুরু করে ক্রেতার চাহিদা নির্ধারণে আমদানি-সংক্রান্ত তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি ক্রেতাদের যেমন বাইরের তথ্য জানা দরকার, তেমনি বিদেশি ক্রেতাদেরও বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে তথ্য জানা দরকার। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও তথ্য থাকা প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছে ইপিবি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এই ওয়েবসাইটে আমদানি তথ্য না থাকার দুটি কারণ হতে পারে। একটি হয়তো এনবিআর এই তথ্য দিতে চায় না। অন্যটি হলো, এই তথ্যের ভিত্তিতে কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অর্থ পাচারের পরিসংখ্যান তৈরি।

তবে যে কারণেই হোক, এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের স্বার্থে বৈশ্বিক ওয়েবসাইটে আমদানি-রপ্তানির পরিপূর্ণ থাকা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক এই ওয়েবসাইটে আমদানি-রপ্তানির তথ্য থাকলে সহজে বিদেশিরা বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে জানতে পারবে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসার আমদানি-রপ্তানির তথ্য আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে থাকা প্রয়োজন। নইলে বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় বা কী ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে, বিদেশি ক্রেতারা তার তথ্য সহজে পাবে না। সেইসঙ্গে ব্যবসায়ীরাও জানতে পারবে না দেশে কী ধরনের পণ্য কী পরিমাণে আমদানি হয়েছে। সব মিলিয়ে এই তথ্য আইটিসির ওয়েবসাইটে থাকলে বিদেশিরা সহজে বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের ওয়েবসাইট একটি নির্ভরযোগ্য সাইট। বিদেশিরা এই সাইট থেকে বিভিন্ন দেশের বাজার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে থাকেন। যে কারণে এই সাইটে তথ্য না থাকায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য সম্পর্কে তারা কোনো ধারণা পাবে না। একই কারণে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারও সহজ হবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিষয়ে এই সাইটের মাধ্যমে কেউ জানতেও পারবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৭২৯টি পণ্য বিশের ১৬১টি দেশে রপ্তানি হয়। একই ভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, ফিনিশড পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও খাদ্যপণ্য আমদানি করে থাকে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com