
শুল্ক ও ভ্যাটের আওতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর অংশ হিসেবে কর, শুল্ক এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কাজ চলছে।
গতকাল বুধবার দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য ও এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এই সভা আয়োজন করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামে দৃষ্টিনন্দন কাস্টম হাউস ভবন, কর ভবন, ট্যাক্স একাডেমি আধুনিকায়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ভ্যাট ভবনের জন্যও প্রকল্প নেওয়া হবে।
করদাতার সংখ্যা বাড়াতে নানা কাজ করছে এনবিআর। তিনি বলেন, রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ২০২০-২১ অর্থবছর ছিল ২০ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছর সেটি হয়েছে ২২ লাখ ৫০ হাজার। আর চলতি অর্থবছরের এই ৯ মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতার জায়গা তৈরি করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী শিল্পায়নের সঙ্গে বাড়াতে হবে করের আওতা। আমাদের কাছে অনেক প্রস্তাবনা এসেছে। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে আগামীতে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রাজস্ব বাড়াতে হবে। তবে সেইসঙ্গে রাজস্ব জোগানদাতাদের সুযোগ-সুবিধা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় তিনি ব্যক্তিপর্যায়ে করসীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ, ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রুত রিফান্ড করা, এইচএস কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপণের জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেন।
তিনি আরও বলেন, পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোডে অনিচ্ছাকৃত ভুলে প্রায় ২০০-৪০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। পণ্যের বিবরণ সঠিক প্রমাণিত হলে এইচএস কোডের ভুলে জরিমানা না করার সুপারিশ করেন চেম্বার সভাপতি। এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন, এইচএস কোড জটিলতা নিরসন করা হবে। এ ছাড়া কাস্টমস বিষয়ক প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করা হবে।
এনবিআর সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আয়কর দেওয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে দেশের করজাল সম্প্রসারণে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা করার প্রক্রিয়া বিবেচনাধীন আছে বলে জানান।
অন্যান্য বক্তারা বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা, এসএমই খাতে জামানতহীন ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ, সব কাস্টম স্টেশনে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিরেকে শুধু মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাব বিপণনের সুযোগ প্রদান, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালুসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন।