
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়বে বড় জাহাজ। আজ সোমবার থেকে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়বে দেশের প্রধান এই বন্দরে। এতে বেশিসংখ্যক কনটেইনার নিয়ে জাহাজ আসবে বন্দর জেটিতে। ফলে পণ্য পরিবহন খরচ ও বহির্নোঙরে জাহাজ জট কমে আসবে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ারডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট (বাফা) কালবেলাকে বলেন, বড় জাহাজ ভেড়ানো চট্টগ্রাম বন্দরের যুগান্তকারী উদ্যোগ। ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ বন্দরে ভেড়ানোর জন্য প্রস্তুত করায় বহির্নোঙরে জাহাজ জট কমে আসবে। এর ফলে ছোট জাহাজের আগমন কমে যাবে, তুলনামূলক বড় জাহাজ পণ্য ধারণক্ষমতা বেশি হলেও প্রায় ছোট দুটি জাহাজের অপারেশনের সময় সাশ্রয় হবে। ট্রান্সসিপমেন্ট পয়েন্টগুলোতে কনটেইনার জট কমে যাবে। খোলা জাহাজের পণ্য নামানো-উঠানো যাবে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ব্যয় কমে আসবে, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। চট্টগ্রাম থেকে ইউএস পোর্টে নতুন রুট শুরু করা সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমদানি পণ্য নিয়ে সরাসরি বন্দরে জাহাজ ভিড়তে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক কালবলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়বে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ল। এখন বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পাড়ার কারণে বেশ কনটেইনার নিয়ে আসতে পাড়বে। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় বড় জাহাজ ভেড়ানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ পায়।
এ ধরনের জাহাজে মাত্র ১৮০০ থেকে ২২০০ কনটেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড় ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে এসে পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করত হতো। এরপর লাইটারেজ জাহাজ করে পণ্য খালাস করে জেটিতে নিয়ে আসা হতো। একইভাবে রপ্তানি পণ্যও জাহাজীকরণ করা হতো। এতে করে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেশি পড়ত। বর্তমানে ১০ মিটার ড্রাফটের ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়লে বেশি পরিমাণে পণ্য পরিবহন করা যাবে একসঙ্গে। এ ছাড়া ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে জাহাজগুলোকে আর বহির্নোঙরে অলস বসে থাকতে হবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়ালিংফোর্ড কর্ণফুলী নদীর চ্যানেল ও উভয় পাড় নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এখনই ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তাই আমরা এই দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াচ্ছি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙরে প্রতি বছর চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ আসে। শেষ হওয়া বছরের হিসেব অনুযায়ী, এসব জাহাজে ৩২ লাখ কনটেইনার এবং ১১ কোটি টন কার্গো পণ্য এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯৭৫ সালে সাড়ে সাত মিটার গভীরতা ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়তে পারত। আরও খননকাজের পর ১৯৮০ সালে ৮ মিটার গভীর ও ১৭০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯০ সালে সাড়ে আট মিটার গভীর ও ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯৫ সালে ১৮৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ মিটার গভীর ও সবশেষ ২০১৪ সালে সাড়ে ৯ মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানো হতো।