
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছিল প্রজেক্ট শোকেইসের। এতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের বানানো তিনটি প্রজেক্টকে সেরা নির্বাচিত করা হয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টিম_ম্যাট্রিক্স-এর ‘অ্যাগ্রিভিলেজ’। প্রথম রানার্সআপ টিম_হট_হেডস-এর ‘গ্যারেজ_চাই’ এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় টিম_প্রজেক্ট_স্কার্লেট-এর ‘অনলাইন_কম্পাইলার’। তিন প্রজেক্টের বিস্তারিত জানাচ্ছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ—
অ্যাগ্রিভিলেজ
অ্যাগ্রিভিলেজ হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর এমন এক পর্যটন ব্যবস্থা যেখানে কৃষকের ফসলের মাঠ ও তার ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাই হবে পর্যটনের আকর্ষণ। কৃষকরা সেখান থেকে উপার্জনও করতে পারবেন। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এ সিস্টেমটি স্মার্ট ইরিগেশন, প্লান্ট ডিজিজ ডিটেকশনসহ নানা কাজ করবে।
সফটওয়্যারটির প্রস্তুতকারক মো. হেলাল উদ্দীন, তামিম মাহমুদ হাওলাদার, রেজাউল করিম হিরা, সৈয়দ মাহিদুল ইসলাম রাফেল জানান, দিনে দিনে কৃষকরা কৃষির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর মূল কারণ ফসল উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধিসহ উৎপাদিত ফসলের দাম কম এবং তাদের সেকেন্ডারি আয়ের উৎস না থাকা। এই সমস্যার প্রাযুক্তিক সমাধানের খোঁজে অরগানাইজড কৃষির মাধ্যমে কৃষি জমিকেই কৃষি-পর্যটন ক্ষেত্রে রূপান্তরের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় অ্যাগ্রিভিলেজের। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ সহজেই কৃষকের সুসংগঠিত এবং সুসজ্জিত কৃষিজমি পরিদর্শনের পাশাপাশি কৃষকের কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাবে। দর্শনার্থীর পরিদর্শন ফি থেকেই কৃষক উপার্জন করতে পারবেন এবং গ্রাহকরা সুযোগ পাবেন সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে ফসল, সবজি ক্রয়ে। এতে কৃষক যেমন উৎপাদিত পণ্যের দাম ৬০-৭০ শতাংশ বেশি পাবে, তেমনি গ্রাহকও ৩০-৪০ শতাংশ কম দামে পণ্য কিনতে পারবে। পরে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করলে কৃষক তার পণ্য সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবে অ্যাগ্রিভিলেজের সাহায্যে।
এরই মধ্যে অ্যাগ্রিভিলেজ অনেকগুলো কৃষি খামার, মৎস্য খামার এবং মৌসুমি ফুল ও ফলের খামারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাভারের কয়েকটি কৃষি ও ফুলের খামারে অরগানাইজড ফার্মিং নিয়েও কাজ করছে এই সিস্টেম।
অ্যাগ্রিভিলেজের মেন্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সজীব সাহা বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকরা ফসলের যথাযথ মূল্য পান না। তার ওপর বন্যা, খরাসহ দুর্যোগও অনেক কৃষক কাটিয়ে উঠতে পারেন না। সেখান থেকেই আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করি। অ্যাগ্রিভিলেজ তারই ফল।’
তিনি আরও জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি প্রচলিত পর্যটন ব্যবস্থা হলেও আমাদের দেশে এখনো নতুন। তাই অ্যাগ্রিভিলেজ প্ল্যাটফর্মটি আমাদের কৃষকদের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক পর্যটনকে আরও উৎসাহ জোগাবে বলেই বিশ্বাস করি।’
গ্যারেজ চাই
‘গ্যারেজ চাই’ একটি অ্যাপ যা গ্যারেজ লিজিং এবং ভাড়া-সংক্রান্ত সেবা দেবে। এটির ব্যবহারকারীরা ইন্টারফেসের সাহায্যে খুব সহজেই তাদের গাড়ির জন্য গ্যারেজের স্থান খুঁজে পাবেন এবং সেটা ভাড়া নিতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদিতে নেওয়া যাবে গ্যারেজ। এতে গ্যারেজ মালিকরা তাদের অব্যবহৃত স্পেস তালিকাভুক্ত করতে পারবেন।
‘গ্যারেজ চাই’ প্রজেক্টটি যৌথভাবে তৈরি করেছেন নাহিদ রায়হান, নায়িব উদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর হোসেন। তারা জানান, সহজে গ্যারেজ খুঁজে পাওয়া এবং অব্যবহৃত পার্কিং স্পেসগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতেই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অ্যাপটিতে আইওটি সেন্সর এবং এআই পাওয়ার্ড অ্যানালিটিক্সের মতো স্মার্ট প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তারা।
অনলাইন কম্পাইলার
অনলাইন কম্পাইলার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের স্থানীয় মেশিনে কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল ছাড়াই ব্রাউজারে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় কোড লিখতে, কম্পাইল করতে এবং তা রান করতে পারবেন।
প্রকল্পটি তৈরি করেছেন নাহিদ রায়হান এবং আশরাফুজ্জামান আবির। তারা জানান, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আর্থিক কারণে তাদের ল্যাপটপ বা পিসি না থাকায় কোডিং শিখতে পারছে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্রাউজারেও কোড চালানো এবং পরীক্ষা করা সম্ভব।
তারা আরও জানান, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অনলাইন বিচারকের পেছনে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। আমাদের এপিআইটি ব্যবহার করে খরচ কমানো যাবে।