
মুসলিম ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। বড় উৎসব মানেই স্পেশাল সাজ। তবেই না উৎসব হবে পরিপূর্ণ। আর দেশের ফ্যাশনচিত্রের পরিবর্তনটা সবচেয়ে স্পষ্ট বোঝা যায় এই এক দিনের উৎসব ঘিরে। এরই মধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো। আবার আছে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই উৎসব উপলক্ষে নগরীর ফ্যাশন হাউসগুলো আয়োজন করছে র্যাম্প শো ও ফ্যাশন উইকের। সেসব আয়োজন নিয়ে সারাবেলার প্রতিবেদন।
ঈদে প্রেম’স কালেকশন
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেম’স কালেকশনের গুলশান-১ এর শোরুমে ফ্যাশন শোর আয়োজন করা হয়। প্রেম’স কালেকশনের এই আয়োজনে ঈদ উপলক্ষ করে। যেখানে এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা, আনারকলি, পাঞ্জাবি। চাইলে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো পোশাক এখান থেকে কাস্টমাইজ করিয়ে নিতে পারবেন
সেলাইবিহীন জামা কেনার পর অনেকেই চিন্তা করেন ভালো টেইলর কোথায় পাওয়া যাবে। কিন্তু ক্রেতাদের সেই সমস্যার সমাধানও রয়েছে প্রেম’স কালেকশনে। নির্ধারিত চার্জ দিয়ে মন মতো নকশা করে যে কেউ বানিয়ে নিতে পারবে পোশাক।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় তারকা বিদ্যা সিনহা মীম প্রেম’স কালেকশনের ঈদের বিশেষ কালেকশনের পোশাক গায়ে জড়িয়ে আবহমান বাংলার মুসলমানদের প্রধান উৎসবের নানা রূপ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে অংশগ্রহন করেন র্যাম্প মডেলরাও। ফ্যাশন শো’র কোরিওগ্রাফার ছিলেন লুনা। ডিজে ছিলেন মিশু।
বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২৩
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ১৬ ও ১৭ মার্চ দুই দিনব্যাপী ফ্যাশন উইকের আয়োজন করেছে এফডিসিবি (ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ)। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম কালেকশনটি ছিল চন্দনা দেওয়ানের। ঈদুল ফিতরের আগেই আছে পহেলা বৈশাখ। তাই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বর্ণাঢ্য কালেকশনগুলোর ডিজাইন করেছেন চন্দনা।
এরপর মডেলরা ভারতীয় ডিজাইনার গুঞ্জন জৈনের পোশাক পরে র্যাম্প মাতান। দেশীয় তুষার এবং মালবেরি সিল্কের বুননে তৈরি শাড়িতে গুঞ্জন তুলে ধরেছেন ভারতের জালা এবং ইকাত কৌশলগুলোর অত্যন্ত দক্ষ বুনন ঐতিহ্যকে।
গুঞ্জনের পর বাংলাদেশের আফসানা ফেরদৌসী ‘নীল নদীর গল্প’ শিরোনামের কালেকশনটি প্রদর্শন করেন। তার কালেকশনে তুলে ধরা হয়েছে একটি নদীর গল্প ও জলজ জীবন।
প্রদর্শনীর ৪ নম্বরে রিফাত রহমান তার স্প্রিং/সামার ২৩ কালেকশন প্রদর্শন করেন। ডিজাইনার তাসফিয়া আহমেদের কালেকশন ছিল ‘৯০-এর রোমান্টিক’। সাদিয়া রূপার ডিজাইনের অনুপ্রেরণা ছিল পোস্টেজ স্ট্যাম্প ও হাতে লেখা চিঠি।
ভারতের ইবা মাল্লাইয়ের কালেকশনের নাম ‘কিনিহো’। এতে ছিল আধুনিক নন্দনত্ত্বের সঙ্গে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ।
এ ছাড়া নওশীন খায়ের, ইমাম হাসান, তানহা শেখ, রিমি নায়ক (ভারত) ও সর্বশেষ কুহু প্লামন্ডনের ডিজাইন করা পোশাক পরে র্যাম্প মাতান মডেলরা।
এফডিসিবি বাংলাদেশ ফ্যাশন সপ্তাহের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে মডেলরা মাহিন খান, শাহরুখ আমিন, পারমিতা ব্যানার্জী, তেনজিং চাকমা, রুখসানা এসরার, মাধুরী সঞ্চিতা, লালথেলেনমাওয়াই চেনকুল, লিপি খন্দকার, কামরুল হাসান রিয়াদ, ফাইজা আহমেদ, সৌমিত্র মণ্ডল ও শৈবাল সাহার পোশাক পরে র্যাম্পে দ্যুতি ছড়ান।
কে-ক্র্যাফটের ঈদ
১১ মার্চ রাজধানীর আদাবর রিং রোডে ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফটের প্রথম এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার উদ্বোধন হয়। নতুন এ আউটলেটে এবারের ঈদ কালেকশন নিয়ে আয়োজন করা হয় জমকালো এক ফ্যাশন শো।
ফ্যাশন শোর প্রথম কিউ সাজানো হয় মেরুন রঙের থিমে। এরপর কালো, পেস্ট, লালসহ আরও ভিন্ন ভিন্ন রঙের কনসেপ্টে সাজানো হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজসহ সব ধরনের পোশাক। কে ক্র্যাফট ডিজাইন স্টুডিও আয়োজিত ঈদ পোশাকের ফ্যাশন শোর কালেকশনগুলো ছিল প্রশংসনীয়। কে-ক্র্যাফটের সাব ব্র্যান্ড ইয়াং কে কালেকশন নিয়ে সাজানো হয় শেষ কিউ।
দেশসেরা মডেলদের অংশগ্রহণে ফ্যাশন শোতে পোশাকের ১১টি কিউতে প্রদর্শিত হয় ৫০টি নতুন ডিজাইনের পোশাক।
নজরকাড়া ডিজাইনের পসরা
ঈদ ও গ্রীষ্মের কালেকশন পরিচয় করিয়ে দিতে ফ্যাশন ব্র্যান্ড টুয়েলভ আয়োজন করে ফ্যাশন শো ‘টুয়েলভ রানওয়ে’। ফ্যাশন শোতে অংশ নেন দেশসেরা অর্ধশতাধিক মডেল।
অনুষ্ঠানে টুয়েলভের পক্ষ থেকে টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আবদুল্লাহ হিল রাকিব এবারের ঈদ কালেকশন নিয়ে বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র পোশাকের কথাই চিন্তা করি না, আধুনিক ট্রেন্ড এবং ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখেই কালেকশন সাজাবার চেষ্টা করি। আমরা চাই প্রত্যেকটি মানুষ আমাদের তৈরি পোশাকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুক এবং উৎসবকে মনে-প্রাণে ধারণ করুক।’
ফ্যাশন শোতে শো-স্টপার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি ও জনপ্রিয় মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ।