পুরুষ ইঁদুর থেকে ডিম্বাণু!

ফয়সল আবদুল্লাহ
পুরুষ ইঁদুর থেকে ডিম্বাণু!

বিজ্ঞানের অভিধানে অসম্ভব শব্দটি নেই বলে বিশ্বাস করেন জাপানি গবেষক কাতসুহিকো হায়াশি। সম্প্রতি তেমনই এক ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করার ঘোষণা দিয়েছেন লন্ডনের ক্রিক ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক জিনবিষয়ক সম্মেলনে। জানিয়েছেন, একটি পুরুষ ইঁদুর থেকে নেওয়া কোষ থেকেই তিনি তৈরি করেছেন ইঁদুরের ডিম্বাণু

হায়াশির এ গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশের অপেক্ষায় আছে ন্যাচার জার্নাল। তার আগেই বিবিসির খবরে জিন গবেষণা মহলে পড়ে গেছে হৈচৈ। তবে হায়াশি জানালেন, তার গবেষণার ধাপগুলো সহজবোধ্য। প্রথমে তিনি পুরুষ ইঁদুরের ত্বকের কোষ থেকে তৈরি করেন স্টেমসেল (যে কোষ থেকে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয়)। ওই স্টেমসেল থেকে তিনি পুরুষের ‘এক্স-ওয়াই’ ক্রোমোজমের মধ্যে ওয়াই ক্রোমোজোমকে টার্গেট করেন। সেটাকে সরিয়ে তিনি আরেকটি স্টেম কোষের এক্স ক্রোমোজমকে জুড়ে দেন। এতে করে স্ত্রী ক্রোমোজোম এক্স-এক্স তৈরি হয়। পরে ওই এক্স-এক্স ক্রোমোজোমসহ স্টেম কোষটিতে তিনি ডিম্বাণুতে পরিণত হওয়ার প্রোগ্রাম বসিয়ে দেন।

হায়াশি জানালেন, এ প্রক্রিয়ায় তৈরি ইঁদুরের ওই ডিম্বাণুটি সাধারণ ডিম্বাণুর মতো টেকসই নয়। তবে এ বাধা টপকে যেতে ১০ বছরের বেশি লাগবে না।

মূলত এ গবেষণায় এখন সামাজিক বাধাই মুখ্য হায়াশির কাছে। এ বাধা না থাকলে মানুষের কোষ নিয়েও এমন গবেষণার সুযোগ আছে বলে তিনি জানান। তবে এখন ইঁদুর নিয়ে তার এ গবেষণা যে স্তরে আছে তাতে মানুষের ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা চালাতে আরও বহুদূর যেতে হবে বলে জানান হায়াশি।

‘এখন ইঁদুরের যে ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছে, সেটা গুণমান বজায় রাখা নিয়েই অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। আর তাই মানুষের বন্ধ্যত্ব-সংক্রান্ত গবেষণা বা পুরুষের স্টেমসেল থেকে ডিম্বাণু তৈরিতে আরও দীর্ঘ সময় বাকি।’ বললেন হায়াশি। তবে তিনি জোর গলায় বললেন, ‘টেকনিক্যালি এটা সম্ভব। তবে আমি নিশ্চিত নই আমাদের সমাজ এটা গ্রহণ করার জন্য তৈরি কি না।’

অবশ্য হায়াশির এ গবেষণা আদৌ কাজে লাগবে কি না সেটা নিয়েও আছে হরেক প্রশ্ন। কারণ হিসেবে বিবিসিকে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের প্রফেসর আলটা চারো বলেছেন, ‘কিছু সমাজে সন্তানের মধ্যে নিজের জিনগত উপাদান থাকাটাকে অত্যাবশ্যকীয় ধরা হয়। আবার যারা দত্তক নেন তাদের কাছে জৈবিক সংযোগের চেয়ে ব্যক্তিক সংযোগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেমসেল গবেষক প্রফেসর আমান্ডার ক্লার্ক জানালেন, ‘বংশগতি রক্ষার এ প্রক্রিয়া নিয়ে সমলিঙ্গ ও লিঙ্গান্তরিত সম্প্রদায়েরও কিছু না কিছু বলার থাকবে। তাদের পরিবার গঠনে বিশেষ কিছু চাহিদা থাকে। তবে ভবিষ্যতে তাদের অনেকের জন্য এ প্রক্রিয়ায় নিজেদের বংশগতি রক্ষার একটা পথ খুলতেও পারে।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com