
কালো আর কমলা রঙের নতুন স্পেস স্যুট হাতে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। তৈরি করেছে অ্যাক্সিওম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কী আছে নতুন এ স্যুটে? অ্যাক্সিওমের পাঠানো তথ্য ও বিবিসি অবলম্বনে জানাচ্ছেন
-ফয়সল আবদুল্লাহ
চার দশক পর
নাসার সঙ্গে ২২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের চুক্তি সই করার পর দীর্ঘ ৬ মাস গবেষণা করে অ্যাক্সিওম। গত সপ্তাহেই তাদের বানানো স্যুটটির প্রথম পরীক্ষামূলক সংস্করণ অ্যাক্সিওম এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট হাতে পায় নাসা। পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের জন্য এ পোশাকটাই যুৎসই বলে ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
এর আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার পোশাক বদলায় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। এরপর কেটে যায় চার দশক। দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান আর্টেমিস থ্রি-এর মাধ্যমে ৫০ বছর পর আবার চাঁদে পা রাখবে মানুষ। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সালের মিশনটিতে চাঁদে প্রথমবারের মতো পা রাখবেন কোনো এক নারী নভোচারী।
সবার শরীরে ফিট
নাসা থেকে শুরু করে যে কোনো স্পেস এজেন্সির জন্য এ স্যুটটি উপযুক্ত বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওম। আগের স্যুটগুলো সবার শরীরে ফিট হতো না। বিশেষ করে আগের পোশাকগুলোর আকারের কারণে নাসার অনেক নারী কর্মী নভোচারী হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মহাকাশে যেতে পারতেন না। থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে সেলাই ও লেজার রশ্মি দিয়ে কাটাকুটি করে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে আগের ওই সমস্যা না থাকে নতুন পোশাকে।
সব মিশনের জন্য
এক চাঁদেরই আছে অনেক রূপ। এক পাশে গরম, আবার আরেক পাশে ঠান্ডা। দুটোই সামলাতে পারবে নতুন পোশাকের যন্ত্রপাতি ও বিশেষ উপকরণগুলো। মাইক্রোগ্র্যাভিটি তথা ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণ বলয়ের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার জন্য সব প্রযুক্তি আছে এতে। বিশেষ করে চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধের মতো চরম শীতল (মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পরিবেশে টিকে থাকার পরীক্ষায়ও পাস করেছে পোশাকটি।
চলাফেরা
নাসার আগের সবকটা চন্দ্রাভিযানেই পোশাক নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল নভোচারীদের। মোটাসোটা পোশাকটি পরে চাঁদের ওপর হাঁটাই দায় ছিল। হাত থেকে একটা কিছু পড়ে গেলে তো কথাই নেই। চাঁদে পা রাখা দশম ব্যক্তি চার্লস ডিউককে চাঁদের মাটিতে পড়ে যাওয়া একটি হাতুড়ি তুলতেই হতে হয়েছিল গলদ্ঘর্ম। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলে তাকে তুলতে এগিয়ে আসতে হতো আরেকজনকে। নতুন স্যুটে অনায়াসে হাঁটু গেড়ে বসতে পারেন নভোচারীরা।
ক্যামেরা ও অন্যান্য
পোশাকের হেলমেটে থাকছে শক্তিশালী এইচডি ক্যামেরা, যা থেকে চাঁদের এইচডি ফুটেজ সরাসরি আসবে পৃথিবীতে। হেলমেটের দৃষ্টিসীমাও আগের হেলমেটগুলোর চেয়ে বেশি। অর্থাৎ চাঁদ বা মহাকাশে গেলে একসঙ্গে আরও বেশি পরিসরে দেখা যাবে এ পোশাকে। আবার মহাকাশের ক্ষতিকর উজ্জ্বল রশ্মি ও সূর্যের কড়া আলো থেকে আগের চেয়েও বেশি সুরক্ষা দেবে হেলমেটের নতুন গ্লাস।
১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত মোট ১২ নভোচারী নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রামের সুবাদে চাঁদে পা রেখেছিলেন। তারা সবাই পুরুষ। চাঁদে এখনো কোনো নারীর পা পড়েনি। অ্যাক্সিওমের নতুন স্পেস স্যুটের সুবাদে ২০২৫ সালের চন্দ্র মিশনটিতে যে একজন নারী নভোচারী চাঁদে পা রাখতে চলেছেন, সেটাও মোটামুটি নিশ্চিত।