
গবেষকরা একবার হিসাব কষে বলেছিলেন মানুষের চোখ নাকি ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। তবে চোখের জটিল নকশা শুধু মেগাপিক্সেলেই সীমাবদ্ধ নয়। এতে আছে নানা ধরনের আলো শনাক্তকারী ‘কোন’ কোষ। সেই আলোটা আবার থেকে মগজের ভেতর ঢুকে তৈরি করে ছবি। সেটার জন্য আছে নিউরোমরফিক অ্যালগরিদম। তারচেয়েও বড় কথা চোখে দেখার জন্য আমাদের চোখকে নিয়মিত চার্জ দিতে হয় না। আর এমন জৈব প্রক্রিয়া থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পরীক্ষামূলক একটি ক্যামেরা সেন্সর তৈরি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে। যার পরবর্তী ধাপে আসতে পারে ব্যাটারি-মুক্ত ক্যামেরা প্রযুক্তি।
পেন স্টেটের গবেষক কাই ওয়াং জানালেন, “আমরা প্রকৃতি থেকে নকশা ধার করেছি বলা যায়। আমাদের চোখের রেটিনায় যে ‘কোন’ কোষ থাকে সেটা লাল, নীল ও সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল। আর এসব ছবি ও রং আমাদের মগজে ঢোকার আগেই একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক সেগুলোর প্রক্রিয়াকরণ করতে শুরু করে দেয়। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণেই আমাদের চোখে পৃথিবীর বর্ণিল রূপটা ধরা পড়ে।”
এই প্রাকৃতিক বিষয়টা যন্ত্রের ভেতর ধরতেই গবেষকরা এক সারি সেন্সর তৈরি করেছেন, যাতে আছে ন্যারোব্যান্ড ফটোডিটেক্টর নামে ক্ষুদে যন্ত্রাংশ। আর সেটা তৈরি করা হয়েছে বিশেষ পেরোভস্কাইট জাতীয় এক ধরনের আলোকসংবেদী বস্তু দিয়ে। ওটাই আমাদের চোখের ‘কোন’ কোষের মতো আচরণ করবে। আর এর সঙ্গে জুড়ে থাকা নিউরোমরফিক অ্যালগরিদমটাই আমাদের নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো আচরণ করবে।
সাধারণ ফটোডিটেক্টরগুলো আলোর শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে, যার মাধ্যম কাজ করে ক্যামেরা ও অন্যান্য অপটিক্যাল যন্ত্রপাতি। ন্যারোব্যান্ড ফটোডিটেক্টরগুলো প্রতিটি আলোর আলাদা আলাদা বর্ণালি শনাক্ত করতে পারে (লাল, নীল ও সবুজ)।
ওয়াং বললেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের তৈরি পেরোভস্কাইট বস্তুটি শুধু ওই তিন বর্ণালির প্রতিই স্পর্শকাতর। আর আমরা তৈরিও করেছি তিনটি আলাদা পেরোভস্কাইট ম্যাটেরিয়াল যেগুলো মানুষের চোখের মতোই প্রাকৃতিক ওই তিন বর্ণালি শনাক্ত করবে।’
এখনকার সিলিকন ফটোডিটেক্টরগুলো আলো শোষণ করে ঠিকই, তবে রংগুলো আলাদা করতে পারে না। এ কাজে দরকার হয় ফিল্টার। যার কারণে ক্যামেরা ঢোকা আলোর দুই-তৃতীয়াংশই বলা যায় অপচয় হয়।
গবেষকরা জানালেন, তাদের এ প্রযুক্তির বাণিজ্যিকায়নে আরও শক্তিশালী ক্যামেরা তো আসবেই, সেইসঙ্গে ক্যামেরায় আর কোনো ফিল্টারেরও প্রয়োজন হবে না। আবার ক্যামেরার সেন্সর তৈরিতে বিদ্যমান জটিলতাও কমে আসবে।
আবার এ প্রযুক্তি বিদ্যুতের পরিমাণ কমে আসার কারণ ব্যাখ্যা করলেন আরেক গবেষক লুয়াও ঝেং। তিনি বললেন, এ প্রযুক্তিটা অনেকটা সোলার প্যানেলের মতোই। আলো এসে পড়লেই তৈরি হয় বিদ্যুৎ। তাই এই সেন্সরে যখন আলো এসে পড়বে তখন এতে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। আর তাই সেই আলোটাকে ডিজিটাল তথ্যে রূপান্তর করতে আলাদা করে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না।
এ গবেষণার বৃত্তান্ত প্রকাশ হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালের সাম্প্রতিক সংখ্যায়। পেরোভস্কাইট ফটোডিটেক্টরের আরও অনেক যুগান্তকারী সম্ভাব্যতার কথাও তাতে বলা হয়েছে। এ গবেষণার হাত ধরে কৃত্রিম রেটিনা বায়োটেকনোলজির সম্ভাবনাও দেখাচ্ছেন গবেষকরা।